ইন্দো প্যাসেফিক জোনের ধারণা এ অঞ্চলের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন খরচ অর্ধেকের বেশি কমাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেমবন।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি আয়োজিত দুইদিনব্যাপী ‘দ্যা বে অব বেঙ্গল, কানেক্টিভিটি হাব ইন ইন্দো প্যাসিফিক রিজিয়ন’ শিরোনামে আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মার্সি টেমবন বলেন, ‘সিভিয়ার ক্লাইমেট চেইঞ্জ হট স্পট’ এই অঞ্চলকে রক্ষায় আঞ্চলিক সহযোগিতাই পারে উন্নয়ন ও বিকাশের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে হবে।’
সভায় বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। তিনি শান্তি ও উন্নয়নে অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ পারষ্পরিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করে বলে জানান। এ জন্য কানেক্টিভিটি, ব্লু ইকোনমি ও নিরাপত্তা ইস্যু বাংলাদেশের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।
আবদুল মোমেন বলেন, ‘ভারত মহাসাগরের অসীম খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার এ অঞ্চলের মানুষের উন্নত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই জীবনমান পরিবর্তনে সমুদ্রে তার আকারের মতোই সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে।
‘কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় সমুদ্র পারের মানুষদের বড় প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হচ্ছে। সমুদ্রতলের সস্পদেরও যথাযথ আহরণ ও ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘ভারত ও প্যাসিফিক অঞ্চলের বিশাল সমুদ্র অঞ্চল এশিয়া, ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। সমুদ্র এক করেছে পুরো বিশ্বকে। বহুজাতিক স্বার্থকে এক করতে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে বিকল্প নেই।’
অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইটো নায়োকি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইঞ্জিন হিসেবে তৈরি হয়ে আছে। এখন বাংলাদেশকে কেবল তার এই ভৌগোলিক অবস্থান ও সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে।
‘মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমূদ্র বন্দর সে সম্ভাবনার অবকাঠামো হিসেবে গড়ে উঠছে। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সুযোগ এ অঞ্চলের কানেক্টিভিটিতে পরিবর্তন হয়েছে। যা শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজে লাগতে পারে।’
রোহিঙ্গা ইস্যু এ অঞ্চলের চিন্তার কারণ বলেও মন্তব্য করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত নায়োকি।
ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বক্তৃতায় বলেন, ‘ইন্দো প্যাসিফিক ধারণার মূলই হলো ভূরাজনৈতিক সহযোগিতা আর কানেক্টিভিটি।
‘কেউ কেউ সরাসরি এর বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। আবার কেউ কেউ উন্নয়নের স্বার্থে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ভারত, জাপান তাদের অন্যতম।’
তিনি বলেন, ‘মেরিটাইম, ইকোলজি, ক্লাইমেট চেঞ্জ, ট্রেড, ট্রান্সপোর্ট, কানেক্টিভিটি, ডিজেস্টার সিকিউরিটি অ্যান্ড মেরিটাইম সিকিউরিটি বিষয়ে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিকভাবে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রেগুলেটরি বডি ছাড়া হালকা হলেও কিছু অবকাঠামো থাকতেই হবে।
‘ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড পাওয়ার কানেক্টিভিটিতে নেপাল, বাংলাদেশ, মিয়ানমার অবকাঠামো তৈরি করে ফেলতে পারে। এই কাজে ভারত দেশগুলোর সঙ্গে থাকতে চায়। এডিবি, জাইকার মতো উন্নয়ন সহযোগীরাও পাশে থাকতে হবে। এই পুরো অঞ্চলকে যুক্ত করবে এই কৌশল।’
সেন্টার ফর বে অব বেঙ্গল স্টাডিসের ডিরেক্টর তারেক এ করিম বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় স্থান হলো ইন্দো প্যাসেফিক অঞ্চল। তাই উন্নয়নের সুযোগ কাজে লাগানোর সময় এসেছে। আমরা এক সময় নিজে নিজেই এ সুযোগ কমিয়ে ফেলেছিলাম।
‘মেরিটাইম ট্রেড হাব ইন দিস রিজিয়ন’ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেমবন বলেন, ‘ইন্দো প্যাসেফিক অঞ্চলের যোগাযোগে ব্যয় কমাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পালন করতে হবে প্রধান চালিকা শক্তির ভূমিকা।’
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন মানব সম্পদ বাড়াতে ও হালনাগাদ প্রযুক্তিতে দক্ষ হওয়ার আহ্বান জানান।