বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওয়াজের নামে ‘অর্থলিপ্সু’ যুক্তিবাদীর ‘প্রতারণা’

  •    
  • ১৩ মার্চ, ২০২১ ২৩:৫৮

কিশোরগঞ্জ মিঠামইন এলাকার হোসেনপুর গ্রামে একটি ওয়াজ মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে যাওয়ার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হলেও সেখানে যাননি মাওলানা হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী। আর প্রধান বক্তা মাহফিলে না যাওয়ায় পণ্ড হয়ে যায় আয়োজন।

মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী বেশি টাকা পেলে প্রতিশ্রুত ওয়াজ মাহফিলে না গিয়ে যেখানে বেশি টাকা পাচ্ছেন সেখানে যান। আর একে ‘প্রতারণা’ হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশ বলেছে, ‘এই প্রতারণার কাজে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন তারই ছাত্র মাওলানা এ বি এম শরিফুল ইসলামকে।’

কিশোরগঞ্জ মিঠামইন এলাকার হোসেনপুর গ্রামে একটি ওয়াজ মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে যাওয়ার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হলেও সেখানে যাননি মাওলানা হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী। আর প্রধান বক্তা মাহফিলে না যাওয়ায় পণ্ড হয়ে যায় আয়োজন।

এ ঘটনায় শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা আল রাসেল। এরপর নারায়ণগঞ্জ থেকে মাওলানা এ বি এম শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায় বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কিশোর শীল।

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ একটি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি মাহফিলে মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তবাদীর সাথে এই প্রতারক পিএস হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই পরিপ্রেক্ষিতেই মাহফিল আয়োজকরা তার (শরিফুল) সঙ্গে যোগাযোগ করে।

‘পাশাপাশি আমরা আরও তথ্য পেয়েছি, মাহফিলের নির্ধারিত দিনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত হওয়ার জন্য মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদীকে যে পরিমাণ ফি দেওয়ার কথা, একই দিনে অন্য কোনো মাহফিলের জন্য এর চেয়ে বেশি ফির অফার পেলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে পূর্বনির্ধারিত মাহফিলে না গিয়ে যারা বেশি টাকা দিচ্ছে সেই মাহফিলে উপস্থিত হন। এ ক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন এই প্রতারককে।’

একই প্রতারণার ঘটনা ঘটে হোসেনপুর গ্রামে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকদের সঙ্গে। ৫ মার্চ হোসেনপুরের ঈদগাহ মাঠে এই মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত হবেন এই আশ্বাস দিয়ে আয়োজকদের একজন শরিফুলের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকার চুক্তি করেন। দুই দফায় তিনি ২৯ হাজার টাকা অগ্রিম নেন। কিন্তু মাহফিলে উপস্থিত হননি মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান। আর প্রধান বক্তা না আসায় উপস্থিত ক্রুদ্ধ লোকজন মাহফিল লন্ডভন্ড করে দেয়।

মামলার বাদী আল রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাহফিল শুরু হলে “হুজুরকে নিয়ে বের হচ্ছি”, “বের হয়েছি”, “রাস্তায় আছি”, “আরও ২০ মিনিট সময় লাগবে”- এসব বলে আমাদের বসিয়ে রাখে। মধ্যরাত পর্যন্ত এমন করে শরিফুল তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে দেন।’

রাসেল বলেন, ‘মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান হুজুরকে আমাদের মাহফিলে প্রধান বক্তা করতে চেয়েছিলাম। একজনের মাধ্যমে মাওলানা শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি নিজেকে হুজুরের পিএস পরিচয় দেয়ায় আমরা বিশ্বাস করি। কারণ, এ ধরনের বিষয়ে কেউ প্রতারণা করতে পারে, তা আমাদের ধারণার মধ্যে ছিল না। তার এই প্রতারণার কারণে আমাদের মাহফিল পণ্ড হয়েছে। স্থানীয়ভাবে আমরা তোপের মুখে পড়েছি। আমরা চাই, এর শাস্তি হোক।’

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মাওলানা এ বি এম শরিফুল ইসলাম নিজেই উপাধি ধারণ করেছেন “যুক্তিবাদী”। নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার বাইতুল মামুর জামে মসজিদে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ইমামতি করলেও তিনি ভিজিটিং কার্ড তৈরি করেছেন নারায়ণগঞ্জ জামে মসজিদের খতিব হিসেবে। ভিজিটিং কার্ডে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন আন্তর্জাতিক ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবে।

‘ইউটিউব শরিফুলের ওয়াজে সয়লাব। বিভিন্ন মাহফিলে দাবি করেন ভারত, দুবাই, সৌদি আরবসহ আরও কয়েকটি দেশে ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে বক্তৃতা করেছেন। এত কিছুর আড়ালে তার মূল পরিচয় তিনি একজন প্রতারক।’

শরিফুলের সঙ্গে হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদীর যোগসূত্র প্রসঙ্গে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এই প্রতারক (শরিফুল) গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন যে, তিনি বিনা টাকায় আর একটি মাহফিল করে দেবেন। তারা যেন পুলিশের কাছে অভিযোগ না করেন। এতে বোঝা যায়, এই প্রতারকের সাথে মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদীর যোগাযোগ রয়েছে।’

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হাফিজ আল ফারুক জানান, ‘শরিফুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী নিজে মোবাইল ফোনে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশ ও অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, যাতে অভিযুক্ত এ বি এম শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করা হয়। এ জন্য মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান বিনা টাকায় মাহফিল করে দিতে চেয়েছেন। এমনকি আজ ডিসি তেজগাঁও অফিসে মাওলানা আজাদী নামে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন, তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদকে অনুরোধ করতে, যাতে আসামিকে ক্ষমা করা হয়।’

তবে এসব বিষয়ে মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিভাগের আরো খবর