বিয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন। তালাক ছাড়া একজন পুরুষ একাধিক বিয়ে করতে পারলেও একজন নারী তালাক ছাড়া বিয়ে করতে পারেন না। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে দ্বিতীয় বিয়ে করতে হবে।
তালাক ছাড়া বিয়ে বা তালাক দিয়ে বিয়ে করার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা থাকতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ‘আমার আইন, আমার অধিকার’ অনুষ্ঠানে।
শনিবার ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আব্দুল্লাহর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার হয় নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
আলোচনায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মিতি সানজানা ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেহেরবা সাবরীন। অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার হয় পদ্মা ব্যাংকের সৌজন্যে।
মিতি সানজানা বলেন, তালাক না দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার ক্ষেত্রে আইনে বলা আছে, স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যাবে না। তবে কারও যদি স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাকে বেশ কিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
কী কী বিষয় মানতে হবে, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাকে তার বর্তমান স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এরপর যে এলাকায় বসবাস করছেন, সেই এলাকার সালিশি পরিষদের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।
আর এই আবেদন করা যেতে পারে কিছু কারণ দেখিয়ে। সেখানে তার প্রথম স্ত্রী অসুস্থ বা কোনো মানসিক দুর্বলতা আছে, সন্তান না হওয়া এমন কিছু কারণ। আবেদনে তাকে দ্বিতীয় বিয়ের কারণ এবং এই বিয়েতে বর্তমান স্ত্রীর সম্মতি রয়েছে কি না, তা উল্লেখ করতে হবে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভার মেয়র দুই পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে সালিশি পরিষদ গঠন করে থাকেন। এমন না যে আবেদন করলেই অনুমতি দেয়া হবে।
সালিশি পরিষদের লিখিত অনুমতি নিয়েই কেবল দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে। সালিশি পরিষদে যদি বর্তমান স্ত্রী অনুমতি প্রদান না করেন, তাহলে কোনোভাবেই দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না।
মিতি সানজানা বলেন, যে ব্যক্তি সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া আরেকটি বিয়ে করেন, তিনি ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ (৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন। আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তির এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য হবে কিনা তা জানতে চাইলে মেহেরবা সাবরীন বলেন, মূলত ধর্ম অনুযায়ি বহু বিবাহকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত ন্যায় করা না হয়। পৃথিবীর কয়েকটি দেশে ধর্মের আলোকে এটা মানা হলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন হতে শুরু করে। তিউনিসিয়া বা তুরস্কে এমন হয়েছে। তারা বহু বিবাহের বিষয়গুলো বাতিল করে দিয়েছে। তাই সবকিছু যদি সঠিকভাবে মানা না হয়, তবে তা নারীর জন্য বৈষম্যমূলক।
তবে একজন নারী বিবাহবিচ্ছেদ না করে পুনুরায় বিয়ে করতে পারবেন না। যদি করে থাকেন, তবে সেটা আইনবহির্ভুত উল্লেখ করে মিতি সানজানা বলেন, একটি বিয়ে থাকা অবস্থায় আইন নারীকে আরেকটি বিয়ে করার অনুমোদন দেয়নি।
মিতি সানজানা বলেন, দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুসারে, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পুনরায় বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পুনরায় বিয়ে করলে তা সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এবং এই অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রতারণাকারী স্বামী বা স্ত্রীর সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।
আগের বিয়ের কথা গোপন রেখে প্রতারণার মাধ্যমে যদি স্বামী বা স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করেন, তবে যাকে প্রতারণা করে বিয়ে করা হলো, তিনি অভিযোগ করলে তা ৪৯৫ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হবে।
আবার কেউ জেনেশুনে অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করলে সে বিয়ে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা মোতাবেক সম্পূর্ণ বাতিল হবে। এক্ষেত্রে তা দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা মোতাবেক ব্যভিচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধ প্রমাণ হলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।
আইনি সুবিধাবঞ্চিত, আর্থিকভাবে অসহায় ভুক্তভোগীরা এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে আইনি সহায়তা চাইলে তাদের পাশে দাঁড়াবে নিউজবাংলার ‘আমার আইন, আমার অধিকার’।