অবশেষে বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলার আপিল শুনানি আলোরমুখ দেখছে।
এক সময় মামলাটির আপিল শুনানি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে গেলেও আদালতের ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটি শেষ হয়নি। এরপর কয়েক দফা আদালত পরিবর্তন হয়ে মামলাটির আপিল শুনানি ঝুলে যায়।
অবশেষে মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্টের তালিকায় এসেছে।
শনিবার সুপ্রিমকোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট আদালতে রোববারের তালিকার দুই নম্বর মামলাটি রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ মামলার শুনানির জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আদালত শুনানির শুরুর নির্দেশ দিলে আমরা শুনানি করব। আশা করছি এবার শুনানি শুরু হলে দ্রুতই মামলাটি শেষ হবে।’
এ মামলাটির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি হয়। শুনানিও শুরু হয় কিন্তু কয়েকদফা আদালত পরিবর্তন হওয়ায় গত ৭ বছরেও শেষ হয়নি মামলাটি।
২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়।
ওই বছরের ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু তারপর আর আগায়নি মামলাটি।
পরে মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ যায়। এরপর মামলাটি যায় বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মোবিনের বেঞ্চে। সেখানে দীর্ঘ দিন থাকার পরও মামলাটি শুনানির জন্য আসেনি। পরে ওই আদালতের বিচারক রদ বদল হওয়ায় মামলাটি আর শুনানি হয়নি।
২০১৪ সালের ২৩ জুন রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন।
রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয় আদালত।
এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা। তবে পলাতক আসামিদের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করা হয়নি।
মুফতি হান্নান ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, মওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মাওলানা আরিফ হাসান সুমন।
এরমধ্যে মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য একটি মামলায়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন ও অনেকে আহত হন।
এ ঘটনায় থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। আর ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।