বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন মুজিববর্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে চমক থাকছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। অবশ্য কী সেই চমক, সেটি খোলাসা করেননি তিনি।
২৬ মার্চ ঢাকা আসছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অনন্য ভূমিকা পালন করা ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এই সফরকে ঘিরে আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অমীমাংসিত বিষয়গুলো সামনে আসছে। আর এই তালিকার প্রথমেই আছে তিস্তা চুক্তি, যা সই হওয়ার কথা ছিল এক দশক আগে।
এই সফরের দুই সপ্তাহ বাকি থাকা অবস্থায় শনিবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মোদির সফরে কী হবে না হবে, তা নিয়ে কিছু উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর শুধুই উদযাপনের নয়। কিছু চমক তো থাকবেই।’
মোদি ঢাকায় এসে প্রথমবারের মতো যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান ও তার সমাধিস্থল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। জেলার ওড়াকান্দিতেও যাবেন তিনি, যেখানে বসবাস করে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।
বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে এলেও ভারতের সরকারপ্রধানের সঙ্গে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে আলোচনা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘বাদ যাবে না দ্বিপাক্ষিক কোনো ইস্যুও। প্রতিটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে অমীমাংসিত ও সম্ভাবনাময় সব ইস্যুতে আলোচনা হবে। ভারতের সঙ্গেও যতগুলো ক্রিটিক্যাল ইস্যু আছে, সবকিছু নিয়ে আলাপ হবে।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হলেও সীমান্ত হত্যা ও তিস্তা চুক্তি না হওয়া সম্পর্কের কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বারবার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই হত্যা আগের চেয়ে কমে এলেও তিস্তা নিয়ে কোনো ভরসাই পাচ্ছে না ঢাকা।
তিস্তা চুক্তি হবে কি না, এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি ১০ বছর আগেই রেডি হয়ে আছে। আনুষ্ঠানিকতা বাকি মাত্র। পাতায় পাতায় সই হয়ে আছে। স্ট্যান্ডবাই আছে। বাস্তবায়ন করা সময়ের ব্যপারমাত্র।’
২০১১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে আটকে যায় সেই চুক্তি। গত এক দশক ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নানান সময় আশ্বাস দেয়া হলেও মমতাকে বাগে আনতে পারেনি তারা। আর চুক্তিও হয়নি।
মোদির সঙ্গে আলোচনায় আন্দামান সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি স্থান পাবে কি না, এমন প্রশ্ন ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের দায় বাংলাদেশের নয়। আন্দামান সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের গ্রহণের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
‘তারা বাংলাদেশ থেকে সতের শ মাইল দূরে আছে, যা ভারতের সীমান্তর কাছে। নিকটবর্তী দেশ তাদের গ্রহণ করবে, এটাই আন্তর্জাতিক নিয়ম। ভারতের কাছাকাছি ওদের নেবার কথা। ইউএনএইচসিআরের আইডি কার্ড থাকায় তারাও ব্যবস্থা নেবে। তাদেরই দেখবার কথা। সব রোহিঙ্গার দায়িত্ব বাংলাদেশ নিতে পারে না।’