পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের নামে পাঁচ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি কীভাবে পেল, সে প্রশ্ন করেছে তাদের পরিবার।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে শনিবার রুবেল-বরকতের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে রুবেলের মেয়ে যাওয়াতা আফনান রাদিয়া এমন প্রশ্ন করেন।
চাঁদাবাজির মামলায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত হন বরকত। অন্যদিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত হন রুবেল। তবে পরিবারের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে রাদিয়া বলেন, ‘রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ থাকে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে শায়েস্তা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। তারই ধারাবাহিকতায় আমার বাবা ও চাচার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ২০০০ সাল থেকে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সরকারি কাজের বিপরীতে ব্যাংক লোন নিয়ে পরিচালিত হয়। বাবার নামে ও কোম্পানির নামে যে জমি রয়েছে তার পরিমাণ ১৫৯ বিঘা এবং এই জমিগুলো তিনটি ব্যাংকে মর্টগেজ দেয়া। ১৫৯ বিঘার মধ্যে চর অঞ্চলে ৩০ বিঘার মতো জমি রয়েছে, যার প্রতি বিঘার মূল্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।‘আমার বাবার তিনটি ব্যাংকে আউটস্ট্যান্ডিং হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লোন রয়েছে। সেখানে তার ব্যাংক হিসাবে পাঁচ-সাত কোটি থাকা কি অস্বাভাবিক?’
রুবেলের মেয়ে বলেন, ‘আমার কাকা বরকতের নামে ২০০ বিঘা জমি আছে, যা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সরকারি কাজের বিপরীতে ব্যাংকে মর্টগেজ দেয়া। লোনের আউটস্ট্যান্ডিং প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো। এ ছাড়া চর অঞ্চলে ৪০০ বিঘা জমির ওপর তার একটি অ্যাগ্রো ফার্ম আছে।’
বাবা-চাচার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে তার বর্ণনা তুলে ধরেন রাদিয়া। তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে একই মামলায় সিআইডি করল ২ হাজার কোটি টাকার মামলা। আবার দুদক করল ৭২ কোটি টাকার মামলা। দুদক ২ বছর অনুসন্ধান করে ৮০০ বিঘার মতো জমি পেল। সেখানে সিআইডি ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি পেল কীভাবে? দুটি সংস্থা দুই রকম হিসাব দেখাচ্ছে।‘তাই দুটি সংস্থা যদি এক জায়গায় বসে কাজ করে বা একে অপরকে তথ্য সরবরাহ করে তাহলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে। ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমির পরিমাণ যে ভুল তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। সিআইডিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে, যা পরিকল্পিত।’
মামলার এজাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ৭ জুন গ্রেপ্তারের পর পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে বললেন, বদরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যা দুইদিন পর ৯ জুন সব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ অস্ত্রসহ সব মামলার এজাহারে বলা হয়েছে বাইপাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
রাদিয়া বলেন, ‘আমার বাবা-কাকার নামে চারটি লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে। তারপরও তাদের নামে অস্ত্র মামলা দেয়া হয়েছে। এ সব অস্ত্র মামলা মিথ্যা এবং প্রভাবিত হয়ে করা।
‘আমার বাবা ও চাচাকে গ্রেপ্তারের পর পর তাদের নামে ১২টি মিথ্যা মামলা দিয়ে ২৭ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। তাদেরকে থানা বা ডিবি অফিসে না নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। আমার চাচা এই অমানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কোর্টে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন।’
রাদিয়া আরও বলেন, ‘আমাদের বাসা ও অফিসে তল্লাশীর নামে পুলিশ যে তাণ্ডব করেছে তা খুবই দুঃখজনক। অফিস থেকে দুটি লকার থানায় নিয়ে যায়।’
সব ঘটনা অনুসন্ধান করে সত্য প্রকাশের জন্য সংবাদ মাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান রুবেলের কন্যা যাওয়াতা আফনান রাদিয়া।
২০০০ কোটি টাকার মামলাকে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে দাবি করে রাদিয়া বলেন, ‘মানি লন্ডারিং মামলা ডকুমেন্টারি মামলা। এই মামলায় বলা হয়েছে আব্বু ও কাকা মিলে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করেছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আব্বু ও কাকা সম্পর্কে অপপ্রচার চলছে।’
আয় বহির্ভূত কোনো কিছু না পেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের গল্প সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রাদিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে রুবেলের ছেলে আদিয়াত হাসান রাফিম ও বরকতের মেয়ে ইসরাত জাহান আদ্রিতি উপস্থিত ছিলেন।
বরকত ও রুবেলের মামলা
দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গত বছরের ২৬ জুন বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বরকত ও রুবেল।
মাদক বিক্রি ও ভূমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অবৈধ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ আছে তাদের নামে।
গত ১৮ জুন সিআইডি কর্মকর্তা মিরাজ আল মাহমুদকে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই দুই ভাই অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
এদিকে, রাজবাড়ীতে ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর এক আইনজীবীকে হত্যা মামলার আসামি এই দুই ভাই।
গত বছরের ১৬ মে রাতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হন ফরিদপুরে ত্রাস হয়ে ওঠা দুই ভাই।
হামলার দুই দিন পর ১৮ মে সুবল সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় ৭ জুন রুবেল-বরকতসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বরকত ও রুবেলের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত।