সাবেক স্ত্রীর করা নির্যাতনের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিব স্ত্রীর হাতে নির্যাতিত হওয়ার পালটা অভিযোগ এনেছেন।
এই অভিযোগের তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে রমনা থানা-পুলিশ।
প্রতিবেদন দেখে নাজমুস সাকিবের সাবেক স্ত্রীকে হাজির হয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলেছে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
৯ মার্চ এই সমন জারি করা হয় বলে জানান সাকিব। সাবেক স্ত্রীর করা এক মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হয়ে জেলেও ছিলেন এএসপি নাজমুস সাকিব।
নাজমুস সাকিবের অভিযোগ, ২০১৭ সালে বিয়ের পর থেকেই নানা ইস্যুতে তানিয়া তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছেন। তার (সাকিব) বাবা-মাকে মারধরও করেছেন। ফেনী, নীলফামারী ও রংপুরে থাকা অবস্থায় এ নির্যাতন হয়।
যৌতুকের দাবিতে দফায় দফায় শারীরিক নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ এনে গত বছরের ৪ মে এএসপি সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাবেক স্ত্রী। বর্তমানে জামিনে রয়েছেন সাকিব।
মামলায় সাকিবের বাবা-মাকেও আসামি করা হয়। আদালতে মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
নাজমুস সাকিব বলছেন, তাকে চাকরিচ্যুত ও সামাজিকভাবে হেয় করতে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। তার অভিযোগ, তিনি ও তার পরিবার স্ত্রীর কাছ থেকে ক্রমাগত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গত বছরের ১ মে স্ত্রীর আঘাতে আহত হন তিনি। এ ঘটনায় সেদিনই তিনি রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে এএসপি নাজমুস সাকিব বলেন, ১ মে দুপুরে ঢাকায় পুলিশ অফিসার্স মেসে স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হন তিনি। স্ত্রী তাকে মেলামাইনের বাটি দিয়ে আঘাত করেন। এতে বাম হাতের কনুইয়ে আঘাত পান তিনি। পরে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন।
জিডিতে সাকিব আরও অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকেই বিভিন্নভাবে তাকে নির্যাতন করে আসছিলেন তার স্ত্রী। মাঝে মাঝে চাকরি খাওয়ার হুমকিও দিতেন। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার জন্যও চাপ দিতেন।
অভিযোগটির তদন্ত শেষে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রমনা থানা-পুলিশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১ মে দুপুরে ইস্কাটন গার্ডেনে পুলিশ অফিসার্স মেসের ১০০১ নম্বর কক্ষে ছিলেন নাজমুস সাকিব ও তার স্ত্রী। কথা কাটাকাটির জেরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়েন স্ত্রী। সাকিবকে তিনি মেলামাইনের বাটি দিয়ে আঘাত করেন। এতে সাকিবের বাম হাতের কনুই কেটে যায়। তদন্তে স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন নাজমুস সাকিবের সাবেক স্ত্রীর আইনজীবী ইশরাত হাসান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালত তলব করেছে; আমরা ব্যাখ্যা দিব। নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে একটি মামলা রয়েছে। এ জন্য সে-ও একটি অভিযোগ করেছে। এটা করে তার সাবেক স্ত্রীকে হুমকি দিচ্ছে, এখন তোমার মামলাটা উঠিয়ে নাও, নইলে আমার মামলায় তোমাকে জেল খাটাব।
‘আমরা তার সমনের কাগজগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছি। সে এটাতে সাক্ষী করছে পাঁচজনকে। এর মধ্যে তিনজন তার কনস্টেবল; আরেকজন তার বাবা এবং অপরজন সে নিজে।’
মামলা তুলে নেয়ার হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাজমুস সাকিব। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যা যা করা যায়, ওরা সবই করছে। এখন সমঝোতার জন্য ৪০ লাখ টাকা দাবি করছে। আমি এত টাকা কোথায় পাব? আমি নিজেই এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
৪০ লাখ টাকা দাবির বিষয়ে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘আমরা গত জানুয়ারিতে পারিবারিক আদালতে একটি মামলা করেছি। এতে কাবিনের ১০ লাখ টাকা, সাকিবের স্ত্রীর বাচ্চা হওয়ার সময় অপারেশনের খরচ এবং গত তিন বছর ধরে যে কোনো খরচ দিচ্ছে না, সব মিলিয়ে আমরা ৩৬ লাখের বেশি টাকা দাবি করেছি। এটাকেই তিনি (নাজমুস সাকিব) হয়তো ৪০ লাখ টাকা দাবির কথা বলছেন। ভুক্তভোগী সমঝোতা নয়, বিচার চান।’
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর স্ত্রীকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাজমুস সাকিব।