বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা ও তার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে যুবলীগ কর্মী মো. আলাউদ্দিনকে হত্যার অভিযোগে মামলা না নিয়ে আবেদনটি ফিরিয়ে দিয়েছে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতেই মামলাটি করতে চেয়েছিলেন মঙ্গলবার রাতে পৌর চত্বরের গোলাগুলিতে নিহত আলাউদ্দিনের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন। এ জন্য প্রায় চার ঘণ্টা থানায় ছিলেন তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবারই গ্রেপ্তার করা হয়েছে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলকে। পুলিশ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।
আলাউদ্দিনের ভাই এমদাদ নিউজবাংলাকে জানান, আবেদনে কিছু ত্রুটি আছে। ত্রুটি সংশোধন করে শুক্রবার সকাল ১০টায় আবেদন নিয়ে আবার থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
মেয়র কাদের মির্জা ও তার কর্মী-সমর্থকদের আসামি করে মামলার আবেদন নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় যান আলাউদ্দিনের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে থানা থেকে ফিরে এমদাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওসি বলেছেন, অভিযোগ লেখায় কয়েকটি জায়গায় অসঙ্গতি রয়েছে। সেগুলো ঠিক করে শুক্রবার সকাল ১০টায় যেতে বলেছেন। তখন মামলা গ্রহণ করা হবে।’
নিহত যুবলীগ কর্মী মো. আলাউদ্দিন
অভিযোগের কোন কোন জায়গায় অসঙ্গতি আছে জানতে চাইলে এমদাদ বলেন, ‘কাল সকালে জানতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারেকশন খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। এটা একটা সেনসিটিভ ইস্যু, হুট করেই মামলা নেয়া যায় না।’
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও মামলা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন: আধিপত্যের গুলিতে স্বপ্নভঙ্গ
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বসুরহাট পৌর শহরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র কাদের মির্জা ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রাত ৮টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলার পর দুই পক্ষ দুই দিকে অবস্থান নেয়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল।
পরে পৌর চত্বরে গোলাগুলিতে প্রাণ হারান যুবলীগকর্মী আলাউদ্দিন, গুলিবিদ্ধ হন আরও ১৩ জন। এ ছাড়া সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ৩০ জন।
সংঘর্ষের সময় কাদের মির্জা পৌরসভা কার্যালয়েই অবস্থান করছিলেন। বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মিজানুর রহমান বাদল, ফখরুল ইসলাম রাহাত, মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু ও আবদুর রাজ্জাক বাহিনীর নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমাকে ও আমার দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে বিনা উসকানিতে সম্পূর্ণ একতরফাভাবে আমার পৌরসভা কার্যালয়ের চারপাশ থেকে ঘিরে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে ও বোমা বর্ষণ করে।’
এতে তার ১০ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ এবং ৫০ থেকে ৬০ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গুলি ও হামলার ঘটনা একতরফা দাবি করে কাদের মির্জা বলেন, ‘কিছু প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যম সেই রাতের ঘটনাকে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বলে প্রচার করেছে। যা সত্যি নয়।’ সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে সংবাদ প্রচারের দাবি জানান তিনি।
তবে সংঘর্ষের রাতেই নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন, কাদের মির্জা ও বাদলের সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন: কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ বাদল গ্রেপ্তার: এসপি
এই দুই পক্ষের সংঘর্ষেই গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি নিহত হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। সে ঘটনার তিন সপ্তাহ পার না হতেই মঙ্গলবার রাতে রক্তাক্ত হয় বসুরহাট।
বাদলকে গ্রেপ্তারের কথা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাদলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগামীকাল কোর্টে গেলে জানা যাবে তিনি কোন কোন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।’
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে নোয়াখালী প্রেসক্লাব এলাকা থেকে বাদলকে তুলে নেয়ার অভিযোগ করেন তার ছোট ভাই রহিম উল্লাহ চৌধুরী বিদ্যুৎ। তবে পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেছিলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
১৬ জানুয়ারির পৌর নির্বাচনে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা। এই নির্বাচনের আগে দল ও নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি।