‘হালাল’ বডি স্প্রেসহ প্রসাধন সামগ্রী বিপণন প্রতিষ্ঠান লাফজ ইন্টারন্যাশনালের বনানী অফিসের গ্রিল ভেঙে চুরি হয় হয় ৬৫ লাখ টাকা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনার রাতে ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিন কর্মী। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরেরা রাতে অফিসে ঢুকে চুরি করে পালিয়ে যায়। চুরির ঘটনা ধরা পড়ে ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরায়। সেই ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয় তিন জনকে।
বুধবার রাজধানী ঢাকা ও নেত্রকোণা থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। তাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক নারীকেও। উদ্ধার করা হয়েছে ৩৯ লাখ টাকা ও চুরির টাকায় কেনা তিনটি মোটরসাইকেল।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. রহিম, সোহেল খাঁ ওরফে কালা সোহেল, সোহেল ও রাশিদা আক্তার।
প্রথম তিনজন সরাসরি চুরিতে অংশ নেন, আর রাশিদাকে সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘সিকিউরিটি গার্ডরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় চোর ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হয়েছিল। তবে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
মশিউর রহমান জানান, ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বনানীর ১৩ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর ভবনের লাফজ ইন্টারন্যাশনালে চুরি হয়। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ম্যানেজার আ. কাউয়ুম আলী বনানী থানায় মামলা করেন। মামলার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিবি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম সাকলায়েন জানান, চক্রটি দিনের বেলা ও রাতে গুলশান-বনানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে অফিস ও বাসা রেকি করে। ঘটনার দিন রাত ১০টা থেকে রহিম, সোহেল খাঁ ও সোহেল বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বাসা এবং অফিস রেকি করেন। পরে বনানীর ১৩ নম্বার সড়কের ওই ভবনের নিরাপত্তার দুর্বলতা খুঁজে পান এবং সেখানে চুরির সিদ্ধান্ত নেন। রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা সময়ে তারা ভবনের পেছন দিকের গাছ বেয়ে লাফজের অফিসে ঢোকেন।
উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, লাফজ ইন্টারন্যাশনালের অফিস থেকে ৬৫ লাখ টাকা চুরির পর সেই টাকা ভাগ করে নেন চারজন। এদের মধ্যে তিনজনই কেনেন নতুন মোটরসাইকেল। আর একজন চুরির টাকার ভাগ পেয়ে করেছেন বিয়ে।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানিয়েছেন, ২৮ লাখ টাকা নেন রহিম, ২৮ লাখ নেন সোহেল খাঁ, সোহেল নেন ৪ লাখ এবং সোহেল খাঁর বোনের স্বামী নেন ২ লাখ। বাকি টাকা বিভিন্নভাবে খরচ হয়।
চুরির পরদিন সকালে মহাখালীর সাততলা বস্তি সংলগ্ন একটি মাঠে বসে এই ভাগভাটোয়ারা করেন তারা। পরে যে যার মতো চলে যান।
আবাসিক ও অফিস এলাকায় সিকিউরিটি গার্ডরা যথাযথভাবে কাজ করছেন কি না- তা আরও বেশি তদারকির প্রয়োজন বলে মনে করেন ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তারক্ষীরা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, তা ভালোভাবে তদারকি করা প্রয়োজন।’
এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ও ভবনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভালো মানের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।