আইন ও বিধি অনুযায়ী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের ওপর জোর দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান মঈন উদ্দীন আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, অনুসন্ধান বা তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা কমানো হবে।
মঈন উদ্দীন বলেন, দুদক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি রোধে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, আইনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও বেশি তৎপর থাকবে বর্তমান কমিশন।
সব ধরনের দুর্নীতির বিপক্ষে সবার অবস্থান স্পষ্ট ও কঠোর হলেও বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কম-বেশি দুর্নীতি থেকে যায় বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের নতুন এই চেয়ারম্যান ।
দায়িত্ব নেয়ার পর বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নতুন চেয়ারম্যান।
দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে ইকবাল মাহমুদের সর্বশেষ কর্মদিবস ছিল মঙ্গলবার। তিনি ২০১৬ সালে দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
এর আগে গত ৩ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মঈন উদ্দীনকে দুদকের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়।
মঈন উদ্দীন বলেন, ‘সমাজ দুর্নীতিমুক্ত থাকুক, দেশ দুর্নীতিমুক্ত থাকুক, এটার ব্যাপারে সবাই একমত। এই চাওয়ার বিপক্ষে আপনি একজনকেও পাবেন না। তারপরও বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কম-বেশি দুর্নীতি থাকে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। যতখানি আমরা অভীষ্ঠ লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি, সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে। ’
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মঈন উদ্দীন বলেন, ‘আমরা দেখব কেন তা শেষ হয়নি। এর সম্ভাব্য কারণগুলো অনুসন্ধান করে তা নিষ্পত্তিতে যথাযথ উদ্যোগ নেব। ’
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি বন্ধে আগের কমিশনের নেয়া বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার যেন উদ্যোগ নেয়, সেই বিষয়ে নতুন কমিশনও কাজ করবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ থাকবে কী না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব কিছুর একটা পদ্ধতি থাকে। পদ্ধতি ও আইন অনুযায়ী যতখানি সুযোগ রয়েছে সেটা আমরা করবো।
অন্যদিকে, দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বিষয়ে তার কমিশনের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিশনের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।’
কেবল আইন দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ চাই না সমাজে দুর্নীতি থাকুক। নিজেদের কর্মকাণ্ডেও যেন সেটা থাকে। সবাই সবার অবস্থান থেকে দুর্নীতি দমনে আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন। বিশেষ করে গণমাধ্যম যা সমাজের দর্পন।’
জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে এই কমিশন কী ধরনের ভূমিকা রাখবে এমন প্রশ্নের জবাবে নতুন চেয়ারম্যান বলেন, জনগণ ও জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণে এই কমিশন সচেষ্ট থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন দুদকের নবনিযুক্ত কমিশনার মো. জহুরুল হকও। তিনি অর্থপাচারের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা বাস্তব, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হচ্ছে। দেশের জন্য এটা বড় ধরনের সমস্যা। এই কমিশন তৎপর থাকবে ভবিষ্যতে যাতে কোনোভাবে অর্থ পাচার না হয়।
তবে যে অর্থ পাচার হয়েছে, সেগুলো ফেরত আনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী কাজ করার কথাও বলেন জহুরুল। তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচারের ব্যাপারে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, আমাদের কাছে লিস্ট চাচ্ছে। আমরা তালিকাগুলো অনুসন্ধান শেষে কোর্টকে জানাব। কোর্ট যে অ্যাকশন নিতে বলবে, সেই অ্যাকশন নেব। ’