বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ছেলে না চাইলে মাদ্রাসায় আর পাঠাব না’

  •    
  • ১০ মার্চ, ২০২১ ২১:১০

ছেলেকে আপাতত মাদ্রাসায় না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জয়নাল। বলেন, ‘আমার ছেলে আঘাত পাইছে। ১৫ দিন, এক মাস পর বিবেচনা করে দেখব। লাগলে এক বছর দেখব। আমার ছেলেকে এখন চাপ দিতে পারব না। আমার ছেলে এখন যেখানে মন চায় সেখানে যাক।’

মানত ছিল, প্রথম সন্তান ছেলে হলে মাদ্রাসায় পড়াবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাই করছিলেন। তবে, শিশুসন্তানকে মাদ্রাসার শিক্ষক যেভাবে মারলেন তাতে মত পালটাচ্ছেন মো. জয়নাল। বললেন, ছেলে না চাইলে তাকে আর মাদ্রাসায় পাঠাবেন না।

মায়ের পিছু পিছু আসা এক শিশুশিক্ষার্থীকে ঘাড় ধরে একটি রুমে নিয়ে বেধড়ক প্রহারের যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীই জয়নালের ছেলে। নিজ এলাকা চট্টগ্রাম হাটহাজারীর মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমি নামে একটি হাফেজি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

ওই মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ ইয়াহইয়ার এমন কাণ্ডে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমন ঘটনার পরও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছেন ওই শিশুর বাবা-মা।

কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিলেও ছেলের ওপর এমন নির্যাতনে তাকে আবার মাদ্রাসায় পাঠানোর ওপর আগ্রহ অনেকটা হারিয়ে ফেলেছেন জয়নাল।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা মানত ছিল, প্রথম যদি মরদ পোয়া হয়, তাইলে কোরআনের প্রথম অক্ষরে নাম রাখব, আর আরবি পড়াব। এ জন্য আমি আট বছর বয়স থাইকা ওরে মাদ্রাসায় দিছি।’

ছেলেকে আপাতত মাদ্রাসায় না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জয়নাল। বলেন, ‘আমার ছেলে আঘাত পাইছে। ১৫ দিন, এক মাস পর বিবেচনা করে দেখব। লাগলে এক বছর দেখব। আমার ছেলেকে এখন চাপ দিতে পারব না। আমার ছেলে এখন যেখানে মন চায় সেখানে যাক।’

মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষার্থীটির সঙ্গে দেখা করতে মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন মা। ফেরার পথে মায়ের পিছু পিছু ছুটে আসে ওই শিশুশিক্ষার্থী। আর তা ঘাড় ধরে নিয়ে যায় শিক্ষক ইয়াহইয়া। একটি কক্ষে নেয়ার পর শিশুশিক্ষার্থীকে জুতা ও সরু বেত দিয়ে বেদম মারধর করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ওই মারধরের ভিডিও। এটি দেখার পর রাত দেড়টার দিকে মাদ্রাসা থেকে শিশুশিক্ষার্থীটিকে উদ্ধার করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। আটক করা হয় নির্যাতনকারী শিক্ষক হাফেজ ইয়াহইয়াকে।

তবে নির্যাতনের শিকার পরিবারের অনীহার কারণে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি বলে নিউজবাংলাকে জানান ইউএনও রুহুল আমিন।

কেন শিক্ষক ইয়াহইয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করছেন না? এমন প্রশ্নে ভুক্তভোগী শিশুশিক্ষার্থীর বাবা মো. জয়নাল বলেন, ‘আমার ছেলেরে মারছে, এই ঘা’টা থাকব হয়তো ১৫ দিন। আমার ছেলে আমার বুকে আছে, সে জন্য আমি শুকরিয়া আদায় করছি।’

ছেলেকে এভাবে মারার জন্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করবেন কি না, এমন প্রশ্নে জয়নাল বলেন, ‘মামলা করে কী করব? এক বছর জেল কাটবে, এর বেশি কী হবে? ও (শিক্ষক) আজকে থেকে কাউরে চেহারা দেখাইতে পারবে? সারা দেশের মানুষ ভিডিও দেখছে। উনার কাছে তো কেউ পড়াবে না।

‘হুজুর একটা অপরাধ করছে... এই মাদ্রাসায় কমচে কম ১৩০ জন পোয়া মাইয়া পড়ে। আমার পোয়ার লাইগা ১৩০ জনরে বিপদে ফেলতে পারব না। কেস করে, মাদ্রাসা বন্ধ কইরা দেয়া, আমার দ্বারা সম্ভব না ভাই।’

ওই শিশুকে বেদম মারধর করায় হাফেজ ইয়াহইয়াকে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে আটক করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রাশেদুল হক জানিয়েছেন, শিশুর অভিভাবকরা আইনি পদক্ষেপ না নিলেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। মামলা হলেই তাতে গ্রেপ্তার দেখানো হবে ইয়াহইয়াকে।

নির্যাতনের শিকার সেই মাদ্রাসার ছাত্রকে জন্মদিনের উপহার দিচ্ছেন ইউএনও রুহুল আমিন। ছবি: নিউজবাংলা

ঘটনার দিন ৯ মার্চ শিশুটির জন্মদিনের কথা জানতে পেরে ১০ মার্চ বুধবার সকালে হাটহাজারী সদরে তার বাড়িতে খেলনা নিয়ে যান ইউএনও রুহুল আমিন।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন তিনি। তাতে লিখেছেন, ‘আট বছরের শিশুটির (সাংবাদিকতার নীতি অনুযায়ী নিউজবাংলা শিশুটির নাম প্রকাশ করছে না) গতকাল জন্মদিন ছিল। আজ সকালে জানার পরে খেলনা উপহার নিয়ে গেলাম বাসায়। জিজ্ঞেস করলাম খেলনা পছন্দ হয়েছে? ছেলেটির ঝটপট উত্তর খেলনা পছন্দ হয়েছে। আরও দুইটা জিনিস আমার ভালো পছন্দ। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী কী? গুল্লি (খেলনা বন্দুক) এবং নিমোট (রিমোট) গাড়ি। আচ্ছা, রাতে কিনে নিয়া আসব? তাহলে দুইটা করে আনবেন। দুইটা করে কেন? আমার ছোট ভাইয়ের জন্যও আনবেন। আচ্ছা।’

ইউএনও আরও লেখেন, ‘ছেলেটার শরীরের ব্যথা নয়, মনের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করছি। শরীরের ব্যথা হয়তো নাপা খেলেই সেরে যাবে। সে দ্রুত ভুলে যাক এই জন্মদিনের স্মৃতি।’

এ বিভাগের আরো খবর