নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বুধবার গোপালগঞ্জে চার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস পালিত হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা কমরেড ওলিউর রহমান লেবু মিয়ার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আড়পাড়ায় সকাল ৮টায় তার কবরে এবং ৯টায় গোপালগঞ্জ পৌর মহাশ্মশানে কমরেড কমলেশ বেদজ্ঞ, বিষ্ণুপদ ও মানিকের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির গোপালগঞ্জ শাখা, উদীচী ও পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় তাদের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সকাল ১০টায় চার মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচারের দাবিতে জেলা শহরের প্রেস ক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে সিপিবির নেতা-কর্মী ও পরিবারের লোকজন অংশ নেন। এ সময় সিপিবির গোপালগঞ্জ শাখার সভাপতি মো. আবু হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নিহার রঞ্জন বিশ্বাস, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক আনিচুর রহমান রাজু, কমলেশ বেদজ্ঞের মেয়ে সুতাপা বেদজ্ঞ বক্তব্য দেন।
চার মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচারের দাবিতে জেলা শহরের প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির গোপালগঞ্জ শাখা
১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া ব্রিজের কাছে দিনের বেলা কুপিয়ে ও পিটিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। উচ্চ আদালতের মাধ্যমে অন্তত ছয়বার স্থগিত হয়েছে মামলাটি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলাটি আবারও নিম্ন আদালতে শুনানির জন্য উচ্চ আদালত থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ কোটালীপাড়া আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনী কাজ শেষে ১০ মার্চ সকালে কোটালীপাড়া উপজেলার সিকির বাজার থেকে নৌকায় করে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। নৌকাটি টুপুরিয়া ব্রিজের কাছে পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত মুক্তিযুদ্ধের ৮ ও ৯ নং সেক্টরের কমান্ডার ও কমিউনিস্ট পার্টি-ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর প্রধান সমন্বয়কারী ওয়ালিউর রহমান লেবু, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিষ্ণুপদ ও মানিককে রামদা, রড, ছ্যানি দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। তা ছাড়া তাদের সঙ্গী বর্তমান জেলা কৃষক লীগ নেতা লুৎফর রহমান গঞ্জরকে মৃত ভেবে দুর্বৃত্তরা ফেলে রেখে যায়।
ওই ঘটনার পরদিন ১১ মার্চ তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল কাদেরের কাছে দেয়া লুৎফর রহমানের ডায়িং ডিক্লেয়ারেশন (জবানবন্দি) অনুযায়ী গোপালগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়।
এতে মুক্তিযুদ্ধের হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীর বীক্রমসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়। মামলার প্রধান আসামি হেমায়েত উদ্দিনসহ ১৭ আসামি ইতিমধ্যে মারা গেছেন। মাত্র ৪ জন জীবিত।
এদিকে, মামলার বাদী লুৎফর রহমান গঞ্জরের কোনো তৎপরতা না থাকায় নিহত কমলেশ বেদজ্ঞের মেয়ে নারীনেত্রী সুতাপা বেদজ্ঞ বাদী হওয়ার জন্য আবেদন করেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট আবেদন মঞ্জুর করে। সেই সঙ্গে মামলার ওপর হাইকোর্টের দেয়া স্থাগিতাদেশ খারিজ করায় মামলাটি আবারও গোপালগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারিক কাজ শুরু হবে।
সিপিবির গোপালগঞ্জ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু হোসেন নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ ৪৮টি বছর অতিবাহিত হলো কিন্তু মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যন্ত হয়নি। এটা চোরাগোপ্তা কোনো হত্যা নয়। এটা প্রকাশ্য দিবালোকের ঘটনা। এর যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে।’