এক্সিম ব্যাংকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকির মামলায় সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদারের আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছে আদালত।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী বুধবার দুপুরে এ আদেশ দেন।
এদিন আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন রন হক সিকদার। পাশাপাশি আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেয়ারও আবেদন করেন। তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মনসুর, কে এম ফুরকান আলী, সোহেল আমীন ও শ্রী প্রাণ নাথসহ ১০-১২ জন আইনজীবী।
জামিন বাড়ানোর আবেদনে বলা হয়, সিকদার গ্রুপের কর্ণধার রন হক সিকদারকে ব্যবসায়িক কাজে প্রায়ই বিদেশে যেতে হয় এবং দেশেও ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সেহেতু জামিন স্থায়ী করা আবশ্যক। জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেননি, তদন্তে বিঘ্ন ঘটাননি এবং আইন ও আদালতের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল।
এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল শাহাদাত হোসেন রন হক সিকদারের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরও ২০-২২ জন আইনজীবী।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করে রন হক সিকদারকে জামিন বাড়ানোর আদেশ দেয়। সেই সঙ্গে ১১ এপ্রিল আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেয়ার বিষয়ে শুনানির দিন রাখে।
গত বছরের মে মাসে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয় সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক শিকদার ও তার ভাই দীপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনায় গত বছর ১৯ মে তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলাও হয়। এর কয়েক দিন পর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার কথা বলে চার্টার্ড ফ্লাইটে তারা থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চলে যান।
সেখান থেকে তারা আগাম জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু ‘বিধিবহির্ভূতভাবে জামিন আবেদন’ করার কারণে গত বছর জুলাই মাসে এই দুই ভাইকে ১০ হাজার ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) জরিমানা করে হাইকোর্টের একটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ। পিপিইগুলো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এর মধ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল হক সিকদারের। বাবাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন ছয় মাস ধরে বিদেশে অবস্থান করা রন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল হক সিকদারকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে ছেলে রন হক সিকদার (হুইলচেয়ারে)। ছবি: নিউজবাংলা
ওই দিন সকালে দেশে পা রাখামাত্রই রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন রন। দুপুরের পর আদালতে নেয়া হলে বাবার জানাজায় অংশ নেয়ার কথা বলে জামিন আবেদন করেন তার দুই আইনজীবী।
পুলিশ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে আটক রাখার আবেদন করে। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেননি। আর ১০ মার্চ পর্যন্ত রনকে জামিন দেন বিচারক। রন দেশে এলেও দীপু এখনও বিদেশেই অবস্থান করছেন।
রন ও দীপুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
রনর বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলা আছে। এই মামলায় তার ভাই দীপু হক সিকদারও আসামি।
গত ১৯ মে করা অভিযোগ, তারা এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে একটি ঘরে বন্দি করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।
মামলায় বলা হয়, সিকদার গ্রুপ এক্সিম ব্যাংকের কাছে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে চেয়েছিল। এরপর ব্যাংকটির দুই কর্মকর্তা ঋণ প্রস্তাবের বিপরীতে গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি পরিদর্শনে যান।
পরিদর্শনে দেখা যায়, সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দাবির তুলনায় বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য কম। তখন এ নিয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
মামলায় বলা হয়, দুই ভাই তাদের গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি সাদা কাগজে সইও নিয়েছেন।
সিকদার গ্রুপের ব্যবসা আছে ব্যাংক, বিমা, বিদ্যুৎ, এভিয়েশন, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো নানা খাতে।
বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জয়নুল হক সিকদার। এর সহযোগী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্যাক পোর্টস, পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন, সিকদার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস, সিকদার রিয়েল এস্টেট ও মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস।