জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের ধারাবাহিক আয়োজন করা হবে।
এ আয়োজনে প্রতিবেশী চারটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নিরাপত্তা উপকমিটির এক সভা শেষে বিষয়টি জানান তিনি।
দেশের বাইরের অতিথি সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী, নেপালের রাষ্ট্রপতি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী—এই চারজনের সফর নিশ্চিত হয়েছে।’
তবে তারা কখন আসবেন সে বিষয়ে চূড়ান্ত করে কিছু জানাননি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্টভাবে তারিখগুলো এখন না বলি। কারণ অনেক সময় চেঞ্জ হয়।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নেয়ার পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
‘অনুষ্ঠানে এখন পর্যন্ত চারজন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান অংশগ্রহণ করবেন বলে আমরা জেনেছি। অনুষ্ঠানস্থলে নিরাপত্তা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা উপকমিটি নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা নিয়ে কামাল বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পুরো আয়োজনে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদেশি কূটনীতিকদের অনুষ্ঠানস্থলে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়া হবে। ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে আগত রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ বিদেশি অতিথিদের সকল যাতায়াতে নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং যেসব হোটেলে তারা অবস্থান করবেন সেই হোটেলগুলোর অভ্যন্তরে এবং বাইরে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি নিরাপত্তা কন্ট্রোলরুম থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে নিরাপত্তার প্রয়োজনে ৯৯৯ সেবাটি সব সময় চালু থাকবে। সকল অনুষ্ঠানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সসহ ফায়ার সার্ভিস নিয়োজিত থাকবে। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সাপোর্ট সেখানে থাকবে।’
ঢাকার বাইরে সব আয়োজনে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে কামাল বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানগণ ঢাকার বাহিরে যে সকল স্থানে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বা পরিদর্শনে যাবেন সে সকল স্থানে গোয়েন্দা নজরদারিসহ সকল নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অনুষ্ঠানের সময় যানজট পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয়া হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশপ্রধানসহ সবাই কাজ করবে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দেবে অনুষ্ঠানে কীভাবে যান চলাচল করবে এবং কোন রাস্তা কতক্ষণ বন্ধ থাকবে।’
করোনা নেগেটিভ সনদ অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যে আয়োজনটা করছি সেটা সীমিত আকারে। যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, বড় আকারে জনসমাগম করা হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘পুরো প্রোগ্রামটা আসলে সারা পৃথিবীতে সম্প্রচার করা হবে। সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু এটি একটি বড় আকারের প্রোগ্রাম এবং সবাই যেন দেখতে পারে, একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে সবাই যেন দেখতে পারে, সেভাবে আমাদের একটা প্রোডাকশন টিম কাজ করছে। কিন্তু আমরা যেহেতু এই কটা দিনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান আছেন, তাই বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি।’
অনুষ্ঠানে প্রতিদিন বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৫০০ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে জানিয়ে কামাল আবদুল নাসের বলেন, ‘যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সে জন্য যারা দাওয়াত পাবেন, তাদের প্রত্যেককে আমরা বলে দিচ্ছি যে কোভিড টেস্ট করতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। সেটা ৪৮ ঘণ্টার একটা ভ্যালিডিটি থাকবে।
‘অতিথিদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তাই কোথায়, কখন কীভাবে কোভিড টেস্ট করতে হবে সেটাও তাদের জানিয়ে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোভিড টেস্টের রিপোর্ট তারা সঙ্গে নিয়ে আসবেন যাতে করে সেখানে অন্যরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হয়। আমরা চাই যে এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুন্দর একটা অনুষ্ঠান করতে।’
১২ মার্চ জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করে অনুষ্ঠানসূচি জানানো হবে জানিয়ে কামাল আবদুল নাসের আরও বলেন, ‘চার দিন ফিজিক্যালি প্রোগ্রাম হচ্ছে। যেহেতু চার দিন ফিজিক্যালি প্রোগ্রাম হবে, সেই চার দিনই আমন্ত্রিত অতিথিরা থাকবেন। বাকি দিনগুলোতে আমরা প্রোগ্রামটা সরাসরি সম্প্রচার করে দেব। কিন্তু সেখানে কোনো ফিজিক্যাল কিছু থাকবে না।’
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা সরাসরি উপস্থিত হতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা রয়েছে। তবে কারা কারা থাকবেন তা পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর নিয়ে কোনো পক্ষের কোনো বাধা বা সমাবেশের কোনো তথ্য আছে কি না জানতে চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো গোপন সংবাদ নেই। এ ধরনের পরিস্থিতি হবে কি না আমরা ঠিক এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমরা মনে করছি, সবাই বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, সবাই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন এবং আমাদের জাতির পিতার উৎসবের এখানে কেউ ডিস্টার্ব করবে বলে আমরা মনে করছি না।
‘তারপরেও গণতান্ত্রিক দেশ, সবার বাকস্বাধীনতা রয়েছে। কে কী বলল...অনেকে অনেক সময় অনেক কিছু বলে।’