বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশুকে প্রহার: আল্লাহর কাছে মাদ্রাসাশিক্ষকের বিচার চান বাবা-মা

  •    
  • ১০ মার্চ, ২০২১ ১২:২০

মঙ্গলবার বিকেলের ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই দিন রাত দেড়টার দিকে মাদ্রাসা থেকে শিশু শিক্ষার্থীটিকে উদ্ধার করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। আটক করা হয় সন্দেহভাজন শিক্ষক হাফেজ ইয়াহইয়াকে।

মায়ের পিছু পিছু আসা এক শিশু শিক্ষার্থীকে ঘাড় ধরে নিয়ে যাচ্ছেন একজন শিক্ষক। তারপর কক্ষে নেয়ার পর সরু বেত দিয়ে বেদম মার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এমন একটি ভিডিও।

৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে শিশু শিক্ষার্থীর ওপর মাদ্রাসাশিক্ষকের এই নির্যাতনের দৃশ্যটি চট্টগ্রাম হাটহাজারীর মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমি নামে একটি হাফেজি মাদ্রাসার।

মঙ্গলবার বিকেলের ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই দিন রাত দেড়টার দিকে মাদ্রাসা থেকে শিশু শিক্ষার্থীটিকে উদ্ধার করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। আটক করা হয় নির্যাতনকারী শিক্ষক হাফেজ ইয়াহইয়াকে।

তবে নির্যাতনের শিকার পরিবারের অনীহার কারণে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি বলে নিউজবাংলাকে জানান ইউএনও রুহুল আমিন।আরও পড়ুন: বলাৎকার নিয়ে বক্তব্য কই, বাবুনগরীকে প্রশ্ন

শিশুর পরিবার থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করা হয়। তাতে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকেলে শিশুর মা মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন তার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে। সাক্ষাৎ শেষে ফেরার সময় ওই শিশু শিক্ষার্থী মায়ের পিছু পিছু ছুটে আসে। এ সময় হিফজ বিভাগের শিক্ষক ইয়াহইয়া শিক্ষার্থীকে ধরে মাদ্রাসায় নিয়ে যান এবং সেখানে নিয়ে বেদম প্রহার করেন।

আল্লাহর কাছে বিচার বাবা-মার

লিখিত আবেদনে শিশুর পরিবার থেকে বলা হয়, ‘হিফজ বিভাগের শিক্ষক তাকে ধরে এনে বেদম প্রহার করে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। উক্ত ঘটনায় আমরা বাবা-মা দুজনই মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ হয়েছি। তথাপি আমার সন্তানের শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমরা কোনো আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করব না। এমতাবস্থায় আটক শিক্ষককে ছেড়ে দেয়ার বিনীত আবেদন করা হলো।’

এ বিষয়ে ইউএনও রুহুল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা রাতেই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। শিক্ষককেও আটক করি। শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টাও করেছি। কিন্তু ওই শিশুর বাবা-মা কোনোভাবেই শাস্তি দিতে দেবেন না। তারা রীতিমতো আমাদের কাছ থেকে ওই শিক্ষককে পারলে ছিনিয়ে নিয়ে যান।

‘প্রায় তিন ঘণ্টা শিশুর বাবা-মার সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। কিন্তু তারা কিছুতেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে চাচ্ছিলেন না। তাদের বক্তব্য, এতে শিক্ষকের অমর্যাদা হবে, শিক্ষক সামাজিকভাবে হেয় হবে। এভাবে অভিযোগ দিতে চাই না, ‘‘আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম’' এসব বলে তারা লিখিত দিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেননি।'

নির্যাতনের শিকার শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখানে ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে। ইউএনও স্যার ও আমরা মামলা নেয়ার ব্যাপারে বলেছিলাম। কিন্তু ভুক্তভোগীর পরিবার কোনোভাবেই মামলা বা অভিযোগ দেবেন না। তারা শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিতে চাননি। যে কারণে ওই শিক্ষককে আটক করে নিয়ে আসা হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা আজকে আবার শিশুর পরিবারের কাছে যাব, ওদের সঙ্গে কথা বলব। মাদ্রাসায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের ওপর নানা ধরনের জঘন্য নির্যাতনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই শিক্ষক কর্তৃক বলাৎকারের শিকার হয়। এসব নির্যাতনের খুব কমই সংবাদমাধ্যমে আসে। লোকলজ্জা ও সামাজিকতার ভয়ে বিষয়গুলো অনেকেই এড়িয়ে চলেন।

গত বছরের নভেম্বর মাসের হিসাব তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন জানিয়েছিল, এক মাসে শুধু কওমি মাদ্রাসাতেই ৪০ ছেলেশিশু বলাৎকারের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয় দুইজনের। লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে আরও এক শিশু।

সংগঠনটি জানায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। তারা জানায়, চেপে যাওয়া ঘটনা আরও বেশি।

‘মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনে মৌলভি সাহেবদের সম্মান কমছে’ বলে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মন্তব্য করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আজকে মৌলভি সাহেবেরা কেন যৌন নির্যাতনের সাথে যুক্ত হবেন? এতে সম্মান কমছে।’

এ বিভাগের আরো খবর