জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজি সেলিমকে হাইকোর্ট ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার পর তার সংসদ সদস্যপদ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকা-৭ আসনের এমপির পরিণতি লক্ষ্মীপুরের সাবেক এমপি কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের মতোই হবে কি না আসছে সেই প্রশ্নও।
- আরও পড়ুন: এমপি পদ হারালেন পাপুল
বিচারিক আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাজি সেলিমের আপিল আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়। ১০ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি আদালত হাজি সেলিমকে ১০ লাখ টাকা জরিমানারও আদেশ দেয়। অনাদায়ে তাকে আরও এক বছরের সাজা খাটতে হবে।
রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে সংসদ সদস্যকে। না করলে তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্য হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে হাজি সেলিমের।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২ (ঘ) এ বলা আছে- নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।
সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে বলা আছে, সংসদ সদস্য কোনো ফৌজদারি অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে বা আদালতে দণ্ডিত হলে বা কোনো নির্বাহী আদেশে আটক হলে, গ্রেপ্তারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ যথাযথ ফরমে গ্রেপ্তার, দণ্ডাদেশ বা আটকের কারণসহ পুরো বিষয় স্পিকারকে জানাবেন।
একইভাবে গ্রেপ্তার হয়ে দণ্ডপ্রাপ্তির পর আপিলের বিবেচনা সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হলে বা অন্যভাবে মুক্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একইভাবে স্পিকারকে অবহিত করবে।
তবে এ ক্ষেত্রে আইন স্পিকারকে সিদ্ধান্ত নেয়ার যে ক্ষমতা দিয়েছে, তার জন্য স্পিকারকে রায়ের কপি হাতে পেতে হবে।
যা হয়েছিল পাপুলের ক্ষেত্রে
মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে পাপুল গ্রেপ্তার হন গত বছরের ৬ জুন। আর তার সাজার রায় গণমাধ্যমে আসে গত ২৮ জানুয়ারি। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপিকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের আদালত।
এই রায়ের কপি হাতে আসার পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি সংসদ সচিবালয় থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পাপুলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুয়েতের আদালত যেদিন পাপুলকে দণ্ডিত ঘোষণা করেছে, সেদিন থেকেই এমপি পদ নেই তার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাপুল সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন। এ কারণে সংবিধানের ৬৭ (১) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ ২৮ জানুয়ারি থেকে তার লক্ষ্মীপুর-২ আসন শূন্য হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে কুয়েতের বিচারিক আদালতের সাজাই পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের জন্য বিবেচিত হয়েছে। তবে দেশের উচ্চ আদালতে হাজি সেলিমের এখনও আপিলের সুযোগ থাকায় তার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত কী হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল, যার মানব ও অর্থপাচারের মামলায় কুয়েতের আদালতে চার বছরের জেলা হয়েছে। ফাইল ছবি
আইনজ্ঞরা যা বলছেন
মঙ্গলবার রায়ের পর পরই দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাজী সেলিমের দুর্নীতি দমন কমিশনের করা দুর্নীতির মামলায় সাজা হয়েছে। সেটা অবশ্যই নৈতিক স্খলন। আমি মনে করি, সংবিধান অনুযায়ী তার আর সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা নেই। অবশ্যই তার সংসদ সদস্যপদ থাকা উচিত না। তবে এ বিষয়ে স্পিকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শফিক আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংবিধানের যে বিধান, তাতে যেখানে দুই বছর সাজা হলেই সংসদ সদস্য পদ থাকে না, সেখানে বেশি হলে তো কথাই নেই। নিয়ম অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ থাকে না।
‘তিনি (হাজি সেলিম) যদি আপিল করেন এবং আদালত আপিল গ্রহণ করে সাজা স্থগিত করে তাহলে সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকবে। অন্যত্থায় থাকবে না।’
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো ফৌজদারি অপরাধে নৈতিক স্খলনের দায়ে সাজা হলে তার সংসদ সদস্যপদ থাকবে না। এটি আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে।’
এই রায়ের পর হাজি সেলিম আর সংসদ সদস্য নেই বলেই মনে করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী হাজি সেলিম আর সংসদ সদস্য নন। নৈতিকভাবেও তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তবে আইন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দিয়েছে স্পিকারকে। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা অবশ্য বলছেন, রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল বিভাগে আপিল করবেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আপিল করব।’