বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওড়াকান্দির মন্দিরে পূজা দেবেন মোদি

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২১ ১৯:৫৬

নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে গোপালগঞ্জের নিভৃত গ্রাম ওড়াকান্দিতে তৈরি হচ্ছে হেলিপ্যাড। সংস্কার করা হচ্ছে রাস্তাঘাট।

বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকার বাইরে যেসব জায়গায় যাবেন, তার মধ্যে একটি হলো গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ওড়াকান্দি। সেখানে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের বাড়িতে যাবেন তিনি।

এ জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ঠাকুরবাড়িসহ আশপাশের এলাকা। নির্মাণ করা হচ্ছে হেলিপ্যাড। হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের বেশ কয়েকজন ভক্ত এরই মধ্যে ঠাকুরবাড়ি এসেছেন এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে সাহায্য করতে।

ঠাকুরবাড়ির এই মন্দির হিন্দু ধর্মাবলম্বী মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।

মোদির সফরসূচি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

তার গোপালগঞ্জ সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগ জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সফরের দ্বিতীয় দিন ২৭ মার্চ সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সেখানে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ পরিদর্শন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও গাছের চারা রোপণ করবেন। এরপর বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে যাবেন কাশিয়ানীর ওড়াকান্দি মন্দির পরিদর্শনে।

কাশিয়ানীর ইউএনও রথীন্দ্রনাথ রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওড়াকান্দি ভ্রমণের কর্মসূচি পেয়েছি। আমরা তার ভ্রমণের ফিজিক্যাল প্রস্তুতি শুরু করেছি। যেমন হেলিপ্যাড নির্মাণ, রাস্তা তৈরি, সংস্কার ইত্যাদি।’

হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দির

তিনি বলেন, ‘ঠাকুরবাড়ির মাঠেই মোদির জন্য হেলিপ্যাড তৈরি করা হচ্ছে। পাশের মাঠেও বিকল্প হেলিপ্যাডের পরিকল্পনা রয়েছে। পুরো বিষয়টি পরিচালিত হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) তত্ত্বাবধানে।

‘বাকি বিষয়গুলো জেলা প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখছেন। আমাদের কেবল এটাই (হেলিপ্যাড নির্মাণ, রাস্তা তৈরি ও সংস্কার) করতে বলা হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা নিউজবাংলাকে জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সফর সম্পর্কে তাকে জানিয়েছে। বিদেশি ভিভিআইপির জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন তা তারা নিয়েছেন।

ঠাকুরবাড়ির একাধিক সদস্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, মোদির সফরকে কেন্দ্র করে সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নানা কাজ শুরু হয়েছে।

ঠাকুরবাড়ির সদস্য পদ্মনাভ ঠাকুর নিউজবাংলাকে জানান, মোদি হেলিকপ্টার থেকে নামার পর হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে আসবেন। সেখানে পূজা শেষে মন্দিরের সামনেই ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এছাড়া মতুয়া সম্প্রদায়ের তিন শতাধিক প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বাড়ির সামনেই আরেকটি মাঠে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে চলছে প্রস্তুতি

ঠাকুরবাড়ির আরেক সদস্য কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর নিউজবাংলাকে জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধিদল ওড়াকান্দি ঘুরে গেছেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ-পরিস্থিতির খোঁজ রাখছেন। নরেন্দ্র মোদিকে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বরণ করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা। তিনি হেলিপ্যাড থেকে নামার পর যে রাস্তা দিয়ে ঠাকুরবাড়ি যাবেন, সে রাস্তার সংস্কার চলছে।

তার এই সফর অনেকটা রাজনৈতিক বলে মনে করছেন কেউ কেউ।আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি যেতে চান মোদি

ঠাকুরবাড়ির সদস্য দেবব্রত ঠাকুর নিউজবাংলাকে জানান, ২৭ মার্চ পশ্চিমবাংলায় বিধানসভার নির্বাচন। সেদিনই নরেন্দ্র মোদি ঠাকুরবাড়ি এলে অবশ্যই তার পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকবে। কেননা পশ্চিমবঙ্গে মতুয়াদের লাখ লাখ ভোটার রয়েছে। তার এখানকার সফরের বিষয়টি জানতে পারলে মতুয়া ভক্তদের মনে আস্থার জায়গা তৈরি হবে। তারা মোদিকে নিজেদের লোক ভেবে নেবে, যার ফসল ঘরে তুলতে পারবে মোদির দল।

বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি সীমা দেবী ঠাকুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই ঠাকুরবাড়িতে আসছেন, এটা শুধু ঠাকুরবাড়ির গর্বের বিষয় নয়, সকল মতুয়ার কাছে গর্বের বিষয়। তিনি আসলে আমরা হিন্দুধর্মীয় মতে উলুধ্বনি, শঙ্খ ও ডঙ্কা-কাসি বাজিয়ে তাকে স্বাগত জানানোর সব আয়োজনই রেখেছি।’

মতুয়া কারা

মতুয়ারা হলো হিন্দুদের একটি সম্প্রদায়, যারা উনিশ শতকের ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুর ও তার পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রবর্তিত মতবাদের অনুসারী। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম ওড়াকান্দির পাশের সাফলিডাঙ্গা গ্রামে। উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে বিবাদের জেরে তিনি ওড়াকান্দি এসে বসতি গড়েন। সেই বাড়িই এখন ‘ঠাকুরবাড়ি’ হিসেবে পরিচিত, যা উপমহাদেশে ছড়িয়ে থাকা লাখ লাখ মতুয়ার কাছে এক পুণ্যভূমি।

নমশূদ্র সম্প্রদায়ের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর ও তার ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুর।

হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসব

তাই প্রতি বছর হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসব ও মেলা হয়। এতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মতুয়ারা ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়িতে আসেন। তাদের হাতে থাকে বিজয় ও সত্যের লাল নিশান। ডঙ্কা (বড় ঢোল) বাজিয়ে উলুধ্বনি দিতে দিতে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দেন তারা।

হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১০তম জন্মদিবস উপলক্ষে আগামী ৯ এপ্রিল ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে হবে ঐতিহ্যবাহী স্নানোৎসব ও মেলা।

এ বিভাগের আরো খবর