করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নিলেও মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ইদানীং করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। টিকা নিলেও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বছরব্যাপী যক্ষ্মাবিষয়ক সচেতনতামূলক কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন ছুটির দিনগুলোয় বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভিড় করছেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশেও যেতে শুরু করেছেন। যে কারণে করোনা শনাক্তের হার কিছুটা বেড়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণটিকা প্রয়োগ শুরু হলেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯১২ জনের দেহে। যা গত দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত ১০ জানুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন রোগী শনাক্ত হয় ১ হাজার ৭১ জন। এই নিয়ে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৪ জন।
যক্ষ্মা নির্মূলের জন্য সরকার কাজ করছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে অসংক্রামক রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো উন্নত করা হচ্ছে। আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করতে হবে।
এ সময় করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দেশের অর্থনীতিও সচল আছে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যক্ষ্মাকে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিই না। কিন্তু কোনো রোগই আসলে ছোট নয়। কোনো রোগকেই অবহেলা করা উচিত নয়। আমরা একসময় মনে করতাম সংক্রামক রোগে বেশি মারা যায়, কিন্তু সেটাই এখন নিয়ন্ত্রণে। আর এদিকে অসংক্রামক রোগ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সুতরাং আমাদের যেকোনো রোগের ক্ষেত্রেই সচেতন হতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাস্থ্য খাততে কখনোই গুরুত্ব দিইনি। শুধু আমরা নই, সারা বিশ্বই স্বাস্থ্য নিয়ে এতটা ভাবেনি। কিন্তু করোনা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেয়া কতটা প্রয়োজনীয়। করোনা আমাদের শিখিয়েছে স্বাস্থ্যকে অবহেলা করলে একটা জাতির কী অবস্থা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, আমরা দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করতে চাই। কিন্তু দিনে দিনে এর জটিলতা বাড়ছে। বিশেষ করে হাড়, অন্ত্র, জরায়ু এবং অস্ত্রোপচারস্থলে যক্ষ্মার সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে, যা নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে অস্ত্রোপচারসংক্রান্ত যক্ষ্মা নির্ণয় ও প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, যক্ষ্মা শুধু নির্দিষ্ট কোনো একটি অঙ্গের রোগ নয়। যক্ষ্মা হয় না, শরীরে এরকম অঙ্গ খুব কমই আছে। শতকরা ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা ফুসফুসেই হয়ে থাকে।
গরমে করোনা কিছুটা বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রতিরোধে দেশে গণটিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে, তবে এখনও কাউকেই দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়নি। এক ডোজ টিকা কখনওই সংক্রমণ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখার নিশ্চয়তা দেয় না। দুই ডোজ টিকা দেয়ার ১৪ দিন পরে প্রতিরোধ ক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে। টিকা দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। যে কারণে বাড়ছে শনাক্তের হার।