ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মৈত্রী সেতু বাংলাদেশের সঙ্গে শুধু সেতুবন্ধন রচনা নয়; ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বড় অবদান রাখবে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সীমান্তরেখা কখনও বাণিজ্যের পথে বাধা হওয়া উচিত নয়।
ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমে ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজের ভার্চুয়াল উদ্বোধনী আয়োজনে এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত স্থাপন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এ সময় ত্রিপুরা প্রান্তে ছিলেন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং উপ মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী যিষ্ণু দেব বর্মা।
প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ করেছে ভারতের সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষ দিকে বাংলায় বলেন, ‘আমি মনে করি এই সেতু আমাদের দুই দেশের মাঝে শুধু সেতুবন্ধনই রচনা করবে না, বরং ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরও ত্রিপুরাবাসী ব্যবহার করতে পারবে।’
প্রতিবেশী ভারত ও বিশেষ করে দেশটির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারের সহযোগিতার বিষয়টি এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হলো বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যখন বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্ণ হচ্ছে, তখন এই মৈত্রী সেতুর উদ্বোধনী আয়োজনে যোগ দিয়ে আমি আনন্দিত।’
সেতু তৈরির প্রাথমিক উদ্যোগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফেনী নদীর ওপর সেতু তৈরির প্রস্তাবটি ২০১০ সালে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী আমার কাছে রাখেন। তিনি আমাকে জানান, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য এই সেতুটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার অনুরোধটি আমরা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছি। ফলে সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়েছে ভারতকে।’
এক দশক পর সেতুটি আজ বাস্তব রূপ পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে ইতিমধ্যে ভারতকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এই সেতু উদ্বোধনের ফলে বাংলাদেশ হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভূবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনব্যবস্থার সুগম হলো।’
আগরতলা থেকে ভারতের সবচেয়ে কাছের সমুদ্রবন্দর কলকাতার দূরত্ব প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার। আর আগরতলা থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে, এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ভারতের সঙ্গে এই সংযোগের মধ্য দিয়ে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছি।
‘আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক সীমারেখা বাণিজ্যের পথে বাধা হওয়া উচিত নয়। আমি মনে করি এই সেতুর মধ্য দিয়ে শুধু ভারতের সঙ্গে নয়; নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে।’
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পোশাকশিল্পে বাংলাদেশের খ্যাতি বিশ্বজোড়া, তাই বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে আমাদের দেশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যোগাযোগব্যবস্থার হাব তৈরি করে বাংলাদেশ তার এই সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে নিতে চায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি এই মৈত্রী সেতুর মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা ও আশপাশের অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। এর প্রভাব সেতুর এপারে বাংলাদেশের মানুষেরও ওপরে পড়বে।’
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৫০ বছর আগে ভারত তার সীমান্ত খুলে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল, আর আজকে আমরা দুটি অঞ্চলের মধ্যে বন্ধন তৈরি করলাম।’
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী এবং জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভুলিনি ১৯৭১ সালে কীভাবে আমার জনগণকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছিলেন, সমর্থন দিয়েছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন। এবং আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম।’