অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া ১৩ বছর কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা হাজি মোহাম্মদ সেলিমের আপিল আবেদনের বিষয়ে মঙ্গলবার রায় দেবে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবে। রায়ের জন্য মামলাটি আদালতের কার্যতালিকার এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রায়ের পূর্বে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’
হাজি সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, আমাদের আপিল গৃহীত হবে। তিনি খালাস পাবেন। কেননা মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে একটি মামলার ট্রায়াল শেষ করা; এক দিনে ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ করা অবিশ্বাস্য।’
তিনি বলেন, ‘এর আগেও বলেছি, ১/১১ সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মাত্র তিন দিনে ট্রায়াল করে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তার কোনো আয়বহির্ভূত সম্পদ খুঁজে পায়নি দুদক। তবে ১৯৮৬ সালে করা বাড়িটি ২০০৭ সালের মূল্য ধরে অ্যাসেসমেন্ট করেছে, যেখানে একটা ফিগার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া মামলা চলার সময়ে তার স্ত্রী মারা যান। তার স্ত্রীর সম্পদ পৃথক করা হয়নি। এভাবে সম্পদের অভিযোগ এনে কাউকে সাজা দেয়া যায় না।’
ফাইল ছবি।
রায়ে সাজা বহাল থাকলে হাজি সেলিমকে কারাগারে যেতে হবে কি না জানতে চাইলে তার আইনজীবী বলেন, ‘এটা বিচারকের ওপর নির্ভর করছে। কেননা সেখানে যদি আত্মসমর্পণের জন্য সময় দেয়া হয় কিংবা আপিল আবেদনের জন্য আদালত সময় দেয়। সেটা রায়ের ওপর নির্ভর করছে। তবে আপিল খারিজ হলে আত্মসমর্পণের সময় চেয়ে আপিলে আবেদন করতে সার্টিফাইয়েড কপির জন্য আবেদন করব।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হাজি সেলিম তার এলাকায়ই আছন। স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় লালবাগ এলাকার একটি মসজিদে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন তারা। রায় নিয়ে তার মধ্যে কোনো ধরনের উদ্বেগ দেখা যায়নি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাজি সেলিমের আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৯ মার্চ দিন ঠিক করে দেয় হাইকোর্ট।
গত ৩১ জানুয়ারি মামলায় আপিলের পুনঃ শুনানি শুরু হয়। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। হাজি সেলিমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার ও তার ছেলে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তামান্না ফেরদৌস।
গত বছরের ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতে থাকা যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করে হাইকোর্ট। সে আদেশ অনুসারে নথি আসার পর আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য হয়। পরে ৩১ জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে লালবাগ থানায় মামলাটি করে দুদক। মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন হাজি সেলিম। এরপর ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের সাজা বাতিল করে।
আরও পড়ুন: হাজি সেলিমের ঠিকানা কারাগার কি না, হাইকোর্ট জানাবে ৯ মার্চ
পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
গত ৮ নভেম্বর দুদক থেকে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। পরদিন ৯ নভেম্বর মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত করতে তিনি আদালতে আবেদন (মেনশন) করেন। এরপর আপিলটি কার্যতালিকাভুক্ত হওয়ার পর ১১ নভেম্বর নথি তলব করে হাইকোর্ট। নথি আসার পরই শুনানির শুরু হয়।