রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, এ ইস্যুতে পশ্চিমাদের ভূমিকা লজ্জার ও বিব্রতকর।
সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ওমেন্স ইন ডিপ্লোমেসি: হাউ আর উই ডুয়িং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশন প্রধান মিয়া সাপ্পো, মালদ্বীপের হাইকমিশনার সিরোজিমান স্বদীপ, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ফর্ক, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত আনারকলি সিউর উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘তারা মুখে মানবাধিকারের কথা বললেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কিছুই করেনি। তাদের আচরণ রীতিমতো লজ্জার। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর জেনোসাইড চালানোর পরও সে দেশে উন্নত দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য পাঁচ গুণ বেড়েছে। এটা কল্পনা করতে পারেন! তারা এতদিন ধরে রোহিঙ্গা বিষয়ে কেবলই লিপ সার্ভিস দিয়েছে। আদতে কিছুই করেনি। এটা সত্যিই লজ্জার ও বিব্রতকর।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কুতুপালং থাকবে, না ভাসানচরে থাকবে- সেটা নিয়ে না ভেবে তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত যাওয়ার কথা ভাবুন। মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যের খেলা না খেলে প্রকৃত চাপ সৃষ্টি করুন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার বেশির ভাগই নারী। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করা। তাদের পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ জীবনের জন্য রাখাইনের নিজ ভূমে ফেরত যাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
‘একটি দেশ বারবার মানবাধিকার ভঙ্গ করবে, গণহত্যা করবে- এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ জন্য আঞ্চলিক জঙ্গিবাদের উদ্ভব হচ্ছে।’
মোমেন বলেন, বিশ্বকে আরও শান্তিপূর্ণ ও মানবিক করতে নারী কূটনীতিক তৈরির বিকল্প নেই। নারী-পুরুষের সমতা বিধানও জরুরি।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মকর্তারা বলেন, দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে ফরেন সার্ভিস একাডেমি। ফরেন সার্ভিসে ১৯৭০ সালে মাত্র দুইজন নারী কূটনীতিক ছিলেন। এখন সে সংখ্যা ৮, যারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩০ ভাগে পৌঁছেছে।
তারা বলেন, ফরেন সার্ভিসে নারীদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো লক্ষণ।
এ সময় তারা নারীর অর্জনকে বড় করে তুলে ধরার পক্ষে মত দেন। বলেন, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হবে সবার আগে। ভালো কিছুর জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে নারীদেরই।
নারী কর্মকর্তারা আরও বলেন, কূটনীতিতে এখনও পুরুষ আধিপত্য বেশি। রাজনৈতিক পদগুলোতে নারীদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব নেই। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে পরিবারের সহায়তা ও সঙ্গ খুব বেশি প্রয়োজন। দেশকে ব্রান্ডিং করতেও নারীরা হতে পারেন রোল মডেল।