বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টাকা মেরে জমি কিনতেন পি কে হালদার

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২১ ১০:১০

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় গাউছিয়া মার্কেট-২-এ পি কে হালদারের একটি গোপন গুদামের খোঁজ পায় দুদক। সেখানে কয়েক বস্তায় মেলে অসংখ্য দলিল-দস্তাবেজ, যেগুলো তার ৭১ একরেরও বেশি জমির প্রমাণ। সেগুলো বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি একটি ১০ তলা ভবনও হেফাজতে নিয়েছে সরকার।

জমি কেনার নেশা ছিল প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আত্মসাৎ করে তার একটা অংশ তিনি বিনিয়োগ করতেন জমিতে। কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করা পি কে হালদারের এসব জমির সন্ধান পেয়ে তা বাজেয়াপ্তও করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় গাউছিয়া মার্কেট-২-এ পি কে হালদারের একটি গোপন গুদামের খোঁজ পায় দুদক। সেখানে কয়েক বস্তায় মেলে অসংখ্য দলিল-দস্তাবেজ, যেগুলো তার ৭১ একরেরও বেশি জমির প্রমাণ। সেগুলো বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি একটি ১০ তলা ভবনও হেফাজতে নিয়েছে সরকার।

তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকার পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। তিনি গত অক্টোবরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে প্রথমে ভারত যান, পরে চলে যান কানাডা।

পি কে হালদারের বেশ কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তাদের ব্যাংক হিসাবে থাকা দেড় হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।

পি কে হালদারের মামলার তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, কানাডায় পলাতক পি কে হালদারের জমি কেনার নেশা ছিল, এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে দুদক। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আত্মসাৎ করে তার বড় একটি অংশ জমিতে বিনিয়োগ করতেন বলে প্রমাণ মিলেছে।

দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীন বলেন, ‘তদন্তে দেখা গেছে আর্থিক খাত থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি লুটপাটে অভিযুক্ত আলোচিত এই পি কে হালদার কেবল নিজের নামেই না, অন্যের নামে বা বেনামেও প্রচুর জমির মালিক। এসব জমিতে তিনি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।’

দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে শ শ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে জমি কিনেছেন পি কে হালদার। আবার সেই জমি দেখিয়েই ঋণ নিয়েছেন।পি কে হালদারের যত জমি:

গোপন গুদামে অভিযান চালিয়ে দুদক যেসব দলিল-দস্তাবেজ উদ্ধার করেছে তার মধ্যে ঢাকার উত্তরা আবাসিক এলাকার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৫ কাঠা জমির দলিল আছে। দলিলে এই জমির মূল্য দেখানো হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি। জমির মালিক হিসেবে নাম রয়েছে পূর্ণিমা রাণী হালদারের, যিনি পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি উইনটেল ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার হিসেবে পরিচিত।

ঢাকার তুরাগে দিয়াবাড়ি মৌজায় পি কে হালদারের কেনা আরেকটি জমির দলিল পেয়েছে দুদক। এই জমির দলিল নিজের নামেই করেছেন তিনি। জমিটির ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। দলিলে জমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং রেজিস্ট্রেশনের তারিখ ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল।

উত্তরার তুরাগে পি কে হালদারের বাড়িঘরসহ ৫ কাঠার একটি জমির খোঁজ পেয়েছে দুদক। এটিও তার নামেই। জমিটির ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ৭৬ লাখ টাকা। পল্লবী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত জমিটির দলিল নম্বর ২৬৩৭।

ঢাকার ধানমন্ডির ১ নম্বর রোডে পি কে হালদারের একটি ফ্ল্যাটের দলিল পেয়েছে দুদক। ৩৫ লাখ টাকা মূল্য দেখানো ফ্লাটটির রেজিস্ট্রেশন হয় ২০১৫ সালে।

অভিযানে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের আধুরিয়া মৌজার সাড়ে ৭৭ শতাংশ জমির দলিল পেয়েছে দুদক। জমির মালিক হিসেবে নাম রয়েছে পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি অরিয়ল ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক অনঙ্গ মোহন রায়ের। রূপগঞ্জের পূর্ব সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত জমিটির দলিল নম্বর ৬৭০৯। দলিলে জমি রেজিস্ট্রেশনের তারিখ দেখানো হয়েছে ২০১১ সালের ১২ জুলাই। মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৬০ লাখ টাকা।

৩ কোটি ৬৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দলিলমূল্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আধুরিয়া মৌজার ২০০ দশমিক ৫৩ শতাংশ জমি কিনেছেন পি কে হালদার। দলিলে জমিটির মালিক হিসেবে রয়েছে পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক প্রতিষ্ঠানের স্বপন কুমার মিস্ত্রীর নাম।

একই মৌজায় প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকায় নিজ নামে জমি কিনেছেন পি কে হালদার। জমির পরিমাণ ১৬২ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া ওই মৌজায় ১৬০, ১৮১ ও ১৮৫ শতাংশ জমির দলিল পেয়েছে দুদক, যার সবই পি কে হালদারের নিজের নামে কেনা এবং প্রত্যেক জমির মূল্য ৩ কোটি টাকার বেশি।

২৫ লাখ টাকা দলিলমূল্যে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের পানাব মৌজায় সাড়ে ৩০ শতাংশ জমি কেনার তথ্য মিলেছে দুদকের তদন্তে। দলিলে জমিটির মালিক হিসেবে নাম রয়েছে অনঙ্গ মোহন রায়ের। একই মৌজায় কেনা সাড়ে ৮৮ শতাংশ জমির মালিকানায় রয়েছেন পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান জোফায়ার ইন্টারন্যাশনালের সুব্রত দাস।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের দুপতারা ইউনিয়নের বাজবি মৌজায় রয়েছে পি কে হালদারের আরও একটি জমি। এর দলিলমূল্য ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ৫১ শতাংশের জমিটি পি কে হালদার নিজের নামে কেনেন ২০১৬ সালে।

নারায়ণগঞ্জে পি কে হালদারের জমির দলিল-দস্তাবেজের মধ্যে ময়মনসিংহের ভালুকার হাতীবেড়া মৌজার ১০৩ শতাংশ জমির দলিল পাওয়া গেছে, যা পিকে হালদার তার প্রতিষ্ঠানের নামে কেনেন। ২০১৩ সালে দলিল হওয়া জমিটির ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ১২ লাখ ৫২ হাজার টাকা।ভালুকার উথুরা মৌজায় মিলেছে পি কে হালদারে ৩৮ শতাংশ জমির সন্ধান, যার রেজিস্ট্রেশন মূল্য দেখানো হয় ১২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া উথুরা মৌজার ৩৩ শতাংশের একটি জমিরও দলিল পেয়েছে দুদক, যা কেনা হয় ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকায়।

দুদক ময়মনসিংহ জেলায় পি কে হালদারের কেনা জমির আটটি দলিল উদ্ধার করেছে। এ সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।তিনি জানান, নরসিংদীর মহিষাশুড়া ইউনিয়নের চৌদ্দ পাইক্যা মৌজায় পি কে হালদারের ৪৮৯ শতাংশ জমির দলিল পেয়েছে দুদক। তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান উডব্রিজ লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ইমতিয়াজ আহমেদ সিরাজীর নামে কেনা হয়েছে জমিটি। এটি নরসিংদী সাব রেজিস্ট্রার অফিসের রেজিস্ট্রি করা, যার দলিল নম্বর ৩৪২৬। দলিলে রেজিস্ট্রেশনের তারিখ দেখানো হয়েছে ২০০৮ সালের ২০ মার্চ; ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

একই মৌজায় ৩৪ শতাংশের আরেকটি জমিও কিনেছেন পি কে হালদার, যার দাম দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। একই মৌজায় আরও ২৭ শতাংশ জমি কিনেছেন পি কে হালদার। এর মালিক হিসেবে নাম রয়েছে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক কোম্পানির মোহাম্মদ জাহেদুল আবেদীনের।

কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজায় দুই একর জমির দীর্ঘমেয়াদে বন্দোবস্ত নিয়েছেন পি কে হালদার। সে জমিতে একটি হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে। ক্লিউস্টোন ফুডস অ্যান্ড অ্যাকোমোডেশন নামের প্রতিষ্ঠানের অধীনে হোটেলটির যাবতীয় মালিকানা রয়েছে পি কে হালদার ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানির লোকদের নামে।

দুদক বলছে, এর বাইরেও পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের নামে থাকা আরও ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সম্পত্তি এবং ব্যাংক আমানতের তথ্য পেয়েছে তারা।

এ বিভাগের আরো খবর