সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (সুপ্রিম কোর্ট বার) নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। প্রচারও উঠেছে জমে। নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে ৫১ জন প্রার্থী হয়েছেন।
রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে প্রার্থী পরিচিতি হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২১-২২ বছরের নির্বাচনে ১০ ও ১১ মার্চ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ৭ হাজার ৭২২ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নির্দলীয় হলেও অঘোষিতভাবে এবারও সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের দুটি আলাদা প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দুই দলের সমর্থকদের মধ্য থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীও হয়েছেন অনেকেই।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ থেকে সভাপতি পদে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এবং সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আবদুল আলীম মিয়া জুয়েলকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের (নীল প্যানেল) সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে সভাপতি এবং সম্পাদক পদে বারের বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল পেয়েছেন মনোনয়ন।
এটি ছাড়াও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে আরেকটি প্যানেলে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট ওয়ালিউর রহমান খান এবং সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ নির্বাচন করছেন।
এ ছাড়া লাল প্যানেল নামে আরেকটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ওই প্যানেলে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট কে এম জাবির ও সম্পাদক পদে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর বাইরেও সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচনের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানে আওয়ামী সমর্থিত সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে একটা ভোট দেন। আমি চেষ্টা করব কিছু করতে। আইনজীবী ভবনসহ আইনজীবীদের জন্য সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাব। আইনজীবীদের জন্য জায়গা সংকট হচ্ছে সেটি দূর করতে চেষ্টা করব।’
প্রার্থী পরিচিতি অনুষ্ঠানে আইনজীবীদের ভিড়। ছবি: নিউজবাংলা
বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, ‘এ দেশে টাকাপয়সা ক্ষমতাই শেষ কথা নয়। শেষ কথা হলো আইন, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাব। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে সহায়তা করবেন।’
সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল বলেন, ‘নবীন আইনজীবীরা এই বারের ভবিষ্যৎ। এই বার থেকেই দেশের বড় বড় আইনজীবী হয়েছেন, বিখ্যাত হয়েছেন। আইনজীবীদের বসার জায়গা সংকট নিরসনে কাজ করে যাব। আমি যদি নির্বাচিত হই, তাহলে আইনজীবীদের যে প্রধান সমস্যা জায়গা সংকট এবং উচ্চ আদালতের নিয়মিত বেঞ্চ চালু করার উদ্যোগ নেব।’
অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের মনোনীত সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল গত বছরে তার উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘আগামীতেও যদি তিনি নির্বাচিত হন তাহলে উন্নয়নের সে ধারা অব্যাহত রাখব।’
আইনজীবীদের বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
আওয়ামী সমর্থিত সাদা প্যানেল
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ থেকে (সাদা প্যানেল) এ বছর নির্বাচনে সভাপতি পদে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল প্রার্থী হয়েছেন। এ প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন সহসভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা ও অ্যাডভোকেট আলী আজম, কোষাধ্যক্ষ ইকবাল করিম, সহসম্পাদক ব্যারিস্টার সাফায়েত সুলতানা রুমি ও অ্যাডভোকেট নুরে আলম উজ্জ্বল। সদস্য পদে অ্যাডভোকেট মিন্টু কুমার মণ্ডল, ব্যারিস্টার মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার সানোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট এবিএম শিবলী সালেকীন, অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান রোমান।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে সভাপতি এবং সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া দুটি সহসভাপতি পদে জয়নাল আবেদিন তুহিন ও জালাল আহমেদ, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহমুদ হাসান ও রাশিদা আলম ঐশী, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাহবুব এবং সাতটি সদস্য পদে মনজুরুল আলম সুজন, শফিকুল ইসলাম শফিক, গোলাম মোহাম্মদ জাকির, পারভীন কাওসার মুন্নি, রেদওয়ান আহমেদ রানজিব, নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও ইফতেখার আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন।
অন্যান্য
এর বাইরে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্য থেকে বিদ্রোহী হয়ে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যানেলে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট ওয়ালিউর রহমান খান এবং সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা এবং অ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন লিপি, কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান সম্রাট, সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট জুলফিকার আলী জুনু এবং অ্যাডভোকেট মো. সুলতান মাহমুদ। প্যানেলের সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন অ্যাডভোকেট শাফিউর রহমান শাফি, মুনির হোসেন, অ্যাডভোকেট একেএম মুক্তার হোসেন, অ্যাডভোকেট মহিত উদ্দিন জুবায়ের, আকবর হোসেন, ওয়ালিউর রহমান শুভ ও নাজমুল হাসান।
সব ছাড়িয়ে এবার রেড প্যানেল নামে ভিন্ন আরেকটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
এ প্যানেলে সভাপতি পদে কে এম জাবির, সম্পাদক পদে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি পদে নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ পদে বদিউজ্জামান তপাদার, সহসম্পাদক পদে সাজ্জাদ হোসেন, সদস্য পদে শহিদুল হক, এস কে এম আনিসুর রহমান খান, জহিরুল আলম বাবর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
নির্বাচনে এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ড. ইউনুছ আলী আকন্দ।