করোনাভাইরাস মহামারিতে গণভবনের জীবনকে জেলখানার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশেষে সেই জেলখানা থেকে বের হলেন তিনি। গণভবনের চৌহদ্দি ছেড়ে বেরিয়ে এলেন রোববার ভোরে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই কালজয়ী ভাষণের সুবর্ণজয়ন্তীতে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না বঙ্গবন্ধুকন্যা। ছুটে এলেন বঙ্গন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে।
সেখানেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান তিনি। কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। এ সময় পাশে এসে দাঁড়ান বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে শুরু হয় অঘোষিত লকডাউন। তারপর থেকেই গণভবনে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনও পালন হয় সীমিত পরিসরে।স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজনের স্বাস্থ্যবিধির কারণে নিজেকে গণভবনে আটকে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বের হতে না পারার সেই যাতনা বারবার উঠে এসেছে তার কণ্ঠে।
দিনটি ছিল ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। সেদিন আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাকালে গণভবনে আটকে থাকা জীবনকে সেদিন তিনি তুলনা করেন বন্দিশিবিরের সঙ্গে।
আক্ষেপের সুরে তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘খুব কষ্ট লাগছে, দুঃখ লাগছে। সবাই ওখানে বসে আছে আর আমি দূরে বন্দিশিবিরে আরেকটা জেলখানার মতো বসে আছি।’
এর আগে গত ১৯ নভেম্বরেও দলের এক সভায় যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘এখন আমি একা। কিন্তু জেলখানার মতোই আছি। সেটাই আমার দুঃখ। ২০০৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ছিলাম ছোট জেলে, এখন বড় জেলে আছি।’
এবার সেই আক্ষেপ ঘুচালেন শেখ হাসিনা। ছুটে এলেন ধানমন্ডিতে। তবে অন্যবারের মতো এবার বড় পরিসরের আয়োজন ছিল না ৩২ নম্বরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে ওই এলাকায় বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা নিবেদনে সমবেত হয় হাজারো মানুষ। এবার মন্ত্রিপরিষদ সদস্য বা দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও দেখা যায়নি।
করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার আনার পর ২৭ জানুয়ারি এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় গণটিকাদান কর্মসূচি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে টিকা নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টিকা নেয়ার তৃতীয় দিনের মাথায় গণভবন ছেড়ে বাইরে আসেন তিনি।
গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে গণভবনে কার্যত বন্দিদশা কাটালেও সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় বা দলীয় কোনো কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে আসেননি।
তবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি সব রাষ্ট্রীয়-দলীয়সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব পালন ও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।