বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নামের মিলে বিনা দোষে জেলে

  •    
  • ৬ মার্চ, ২০২১ ২১:১৩

প্রকৃত আসামির বাবা বলেছেন, ‘হেই গ্রামের মানিক হাওলাদার তো প্রকৃত আসামি না। আমার পোলাই আসামি। ঝুট বইল্যা লাভ নাই। একটা মানুষ বিনা দোষে জেল খাটব এইড্যা ঠিক না। ও অন্যায় করছে, অর বিচার ওইব।’

শরীয়তপুরের সখিপুর থানার মানিক হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি বিনা দোষে তিন মাসের বেশি সময় ধরে কারাভোগ করছেন বলে স্বজনরা দাবি করছেন।

প্রকৃত আসামি একই ইউনিয়নের মানিক মিয়া। তিনি পলাতক। তার বাবা বলেছেন, ‘হেই গ্রামের মানিক হাওলাদার তো প্রকৃত আসামি না। আমার পোলাই আসামি। ঝুট বইল্যা লাভ নাই। একটা মানুষ বিনা দোষে জেল খাটব এইড্যা ঠিক না। ও অন্যায় করছে, অর বিচার ওইব।’

পুলিশ ও স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২ জুন সিরাজগঞ্জের সলংগা থানাধীন হাটিকুমরুল এলাকায় র‌্যাব-১২-এর হাতে ফেনসিডিলসহ ধরা পড়েন চারজন মাদক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় উদ্ধার করা হয় ৬৮৮ বোতল ফেনসিডিল। র‌্যাব-১২-এর তৎকালীন স্পেশাল কোম্পানি লিখিত অভিযোগ করলে সলংগা থানায় মামলা নেয়।

ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে ৩ নং আসামি মানিক মিয়ার বাড়ি শরীয়তপুরের সখিপুর থানার সখিপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মালতকান্দি গ্রামে। বাবার নাম ইব্রাহীম মৃধা ও মায়ের নাম লুৎফা বেগম। কিন্তু ধরা পড়ার পর নিজের নাম বলেন মানিক হাওলাদার, বাবার নামের স্থলে তার খালুর নাম নজরুল হাওলাদার এবং মায়ের নামের স্থলে খালা অরুনা বেগমের নাম বলেন। ঠিকানা গ্রামের নাম মালতকান্দির পরিবর্তে বেপারীকান্দি বলেন। কিছু দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান মানিক মিয়া। এরপর থেকে পলাতক।

প্রায় ১০ বছর মামলা চলার পর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১-এর বিচারক ফাহমিদা কাদের ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। রায়ে ওই চার আসামির প্রত্যেককে চার বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও পাঁচ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সখিপুর থানায় পাঠানো হয়। প্রকৃত আসামি মানিক মিয়া তখনও পলাতক। পুলিশ বেপারীকান্দি গ্রামের প্রয়াত নজরুল ইসলাম ও রেজিয়া বেগমের ছেলে মানিক হাওলাদারকে বাড়ি থেকে ২০২০ সালের ২৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে শরীয়তপুর কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর শরীয়তপুর কারা কর্তৃপক্ষ মানিক হাওলাদারকে পাঠিয়ে দেয় সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে। তিনি সেখানেই কারাভোগ করছেন।

মানিক হাওলাদারের পক্ষের আইনজীবী পার্থ সারথী রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একই নামে অনেক ব্যক্তি থাকতে পারেন। তামিল করার সময় তিনি প্রকৃত অপরাধী, নাকি নির্দোষ সেটা পুলিশকেই যাচাই করতে হবে। মানিক হাওলাদার পুলিশকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েছেন। সব কিছু খুলেও বলেছেন। কিন্তু পুলিশ তার কথা শোনেনি। পুলিশ এ ব্যাপারে চরম গাফিলতি করেছে। যার খেসারত দিচ্ছেন একজন খেটে খাওয়া মানুষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানিক হাওলাদারের স্ত্রী সালমা বেগম স্বামীর মুক্তি চেয়ে ২ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন। ৩ মার্চ বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোট বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। আগামীকাল ৭ মার্চ শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।’

মানিক হাওলাদারের স্ত্রী সালমা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলা চালাতে গিয়া নিঃস্ব। আমার যত গরু ছাগল, আঁস মুরগি আছিল, সব শ্যাষ। আমার এই সংসার চলতাছে না। চাইড্যা পোলাপান লইয়্যা আমরা খুব অসহায় আছি। স্বামীর মুক্তি চাই। লগে সব ক্ষ্যাতিপূরণ চাই।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ফারুক মালত বলেন, ‘মানিক মিয়া আসলেই মাদক ব্যবসায়ী। ওর বাবা মায়ও আমারে কইছে, ও তাদের আওতার বাইরে গ্যাছে গা। অহন নিরপরাধ যেই লোকটা জ্যাল খাটতাছে, হেইড্যা লইয়া চেয়ারম্যানের একটা প্রক্রিয়া ছিল। মূল আসামির বাবা-মারে আদালতে আমরা হাজির করছিলাম। কিন্তু লাভ অয় নাই। আমরা চাই নির্দোষ ব্যক্তি মুক্তি পাউক।’

মানিক মিয়ার গ্রামের বাড়ি মালতকান্দি গেলে তার বাবা ইব্রাহিম মৃধা বলেন, ‘ছেলে একটাই। অনেক বছর ধইরা বাড়িত আহে না। কই আছে জানি না।’

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘মামলাটি ১২ বছর আগের। তখন সখিপুর ভিন্ন থানা ছিল না। এই এলাকা ছিল ভেদরগঞ্জ থানার অধীনে। নানা কারণে জাটিলতা ছিল। বিষয়টি আমার নজরেও আসেনি। আদালত এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিল। আমরা দিয়েছি। এখানে যদি পুলিশের কোনো গাফিলতি পাই, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর