করোনা মহামারি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ানোয় লেখক মুশতাক আহমেদকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
চট্টগ্রামে শনিবার এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মুশতাক কেন জামিন পাননি, তা আদালত বলতে পারবে। তার মৃত্যু স্বাভাবিক।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় গত বছরের মে মাসে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে মারা যান। তার মৃত্যুর পর ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পাস হওয়া আইনটি নিয়ে সারা দেশে নতুন করে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে শনিবার দুপুরে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মুশতাক করোনা মহামারি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা ধরনের পোস্ট দিয়েছেন। একটি পেজ থেকে নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছিলেন, সেই কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
লেখক মুশতাক আহমেদ। ছবি: ফেসবুক
‘জামিন কেন পাননি, সেটি কোর্ট বলতে পারবে, এই এখতিয়ার কোর্টের। তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক মৃত্যু, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এভাবে ছেলেধরা নিয়েও গুজব ছড়ানো হয়েছিল।’
হাছান মাহমুদ বলেন, বাঙালি একটি নিরস্ত্র জাতি ছিল, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের একটি ভাষণের মাধ্যমে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। ‘বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বললেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো, শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ সেদিন নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এমন একটি ভাষণ ছিল, যার লাঠি আছে সে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। যার ঘরে দা আছে, লাইসেন্স করা বন্দুক আছে- তা নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিল। যে ভাষণ আজও যে কেউ শুনলে যেভাবে উদ্দীপ্ত হয়, গায়ের লোম যেভাবে খাড়া হয়ে যায়, এমন কোনো নেতার ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে প্রকৃতপক্ষে কেউ দেননি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর কোনো নোট ছিল না, তিনি একনাগাড়ে বলে গেছেন। পৃথিবীতে অনেক ভাষণ আছে, অনেক অর্থবহ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার এ ভাষণে একটা নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীকে সশস্ত্র জনবাহিনীতে রূপান্তর করে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, চতুর শেখ মুজিব প্রকৃত অর্থে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য তাকে অভিযুক্তও করা যাচ্ছে না। এমনভাবে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এর মাধ্যমে সেদিন রিপোর্টার ও তরুণদের উদ্দীপ্ত করেছিল এই ভাষণ।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ অসাধারণ ও অনন্য বিধায় জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনের প্রচার বেশি করার পরামর্শ দেন।
বলেন, ‘বড় বড় স্লোগান ও ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়ার চেয়ে বেশি প্রয়োজন অপপ্রচারগুলোর বিরুদ্ধে সুপ্রচার চালানো, উন্নয়ন ও অর্জনের প্রচার করা।’
সভায় বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব এটিও বলেছেন ৭ মার্চ ইতিহাস। এই ইতিহাসকে আমাদের স্বীকার করতে হবে।
‘আমি ফখরুল সাহেবদের বলব- বাকি যে ইতিহাস বিকৃতি করেছিলেন, সেগুলোরও ভুল স্বীকার করে নেন। তাহলে জাতি আপনাদের সাধুবাদ দিবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির এখন নানা ধরনের মিছিল আছে, দৌড় মিছিল, চোরাগোপ্তা মিছিল, হঠাৎ মিছিল। গতকাল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ নাকি একটি চোরাগোপ্তা মশাল মিছিল করেছেন।
‘তাদের বলব, এভাবে চোরাগোপ্তা মিছিল ও মানুষের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা করে লাভ হবে না। সত্যিকার অর্থে জনগণের কাছে যদি যেতে চান তাহলে ইতিহাসকে মেনে নিন, যেভাবে ৭ মার্চকে মেনে নিয়েছেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন কোনো অর্জন হয়, আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলাম, তখন একটি পক্ষ লেগে গেল অন্য বিষয় নিয়ে মাঠ গরম করার জন্য।
‘অথচ এটি নিয়ে একটি অভিনন্দন তাদের মুখ থেকে আসেনি। এটি তাদের একপেশে ও চিন্তার দৈন্য। দেশের অর্জন যে তাদের চোখে পড়ে না, কানে যায় না সেটিরই বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি উন্নত রাষ্ট্র রচনা করার। সেই স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজকে মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের আগেই বাংলাদেশ নাম লেখাত উন্নত দেশের কাতারে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাঁই সাইঁ করে উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখাতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ‘আমাদের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বছরে জাতিসংঘ ফাইনাল রিকমেন্ডেশন দিয়েছে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। এটি আমাদের দেশের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় অর্জন।’
সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মো. শামসুল হক।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় সভায় অংশ নেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান, সহসভাপতি অধ্যাপক মো. মঈন উদ্দিন, অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মঈন উদ্দিন রাশেদ, জসিম উদ্দিন, আফতাব উদ্দিন আহমেদ, স্বজন কুমার তালুকদার, আবদুল্লাহ আল বাকের ভুইঁয়া, উত্তর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।