মশার উৎপাতে যেমন ত্রাহি অবস্থা, পাশাপাশি বাজারে থাকা মশা মারার উপকরণের রমরমা। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর মুখ উজ্জ্বল। সবার একটাই কথা: আগের থেকে ব্যবসা ভালো।
কিন্তু ব্যবহারকারীরা বলছেন, মশার ওষুধে কাজ হচ্ছে না।
মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মিরপুরের হাসান বাপ্পি বলেন, ‘মশার কয়েল সারা ঘরে জ্বালালেও মশা যেতে চায় না। ইন্ডিয়ান গুডনাইট অন করে রাখলে মশা গুডনাইটকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। কয়েল জ্বালালে কয়েলের উপর দিয়ে ঘোরে।’
এ কারণে মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাটের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা।
গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটের বিসমিল্লাহ্ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের পাইকারি ইলেকট্রিক ব্যাট বিক্রেতা মো. বাহার এখন প্রতিদিন আড়াই থেকে ৩ হাজার ব্যাট বিক্রি করছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, মৌসুমের আগে ব্যাট বিক্রি হতো সর্বনিম্ন ২২৫ থেকে ২৩০ টাকায় এবং সর্বোচ্চ ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়। এখন সর্বনিনম্ন ২৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকায় ব্যাট বিক্রি করছেন তিনি। মশার বৃদ্ধির কারণে পণ্যের সরবরাহে টান পড়ায় প্রতি ব্যাটে দাম ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে।
ব্যাট কোথা থেকে আনা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব ব্যাট চায়না থেকে ইমপোর্ট করা। ইমপোর্টারদের কাছ থেকে আমরা কিনে পাইকারি বিক্রি করি। মাঝে মাঝে ২-১ পিস খুচরা বিক্রি করা হয়।’
মোহম্মদপুরে শহীদ পার্ক মসজিদ মার্কেটে ইলেকট্রনিক দোকানে খুচরা ইলেকট্রিক ব্যাট বিক্রি করেন সবুজ হোসেন। মশা বাড়ায় ব্যাটের চাহিদা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে মশার উপদ্রব, সেই সঙ্গে চাঙ্গা হয়েছে মশা নিধনের ওষুধের ব্যবসা। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, প্রতিদিন সাত থেকে ১০টা ব্যাট বিক্রি করেন তিনি। এসব ব্যাট তিনি নবাবপুর থেকে কিনে আনেন।
রাজধানীর চকবাজার বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি মার্কেট। এখানে সাত থেকে আটটি দোকানে পাইকারি বিক্রি হয় মশার কয়েল।
তৌসিফ অ্যান্ড ব্রাদার্স-এর মালিক বোরহান উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বছরের অন্য সময় দিনে ১০ থেকে ১৫ কার্টন মশার কয়েল বিক্রি হলেও এখন ৪৫ থেকে ৫০ কার্টন বিক্রি হচ্ছে। একটি কার্টনে ৩০ প্যাকেট মশার কয়েল থাকে। সর্বনিম্ন এক প্যাকেট কয়েল ২৭ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়। আমাদের কাছে সাত থেকে আট প্রকারের কয়েল আছে।’
ভেজাল কয়েল নিয়ে অনেকে অভিযোগ তুলছেন উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, ‘বাজারে নিমপাতা-তুলসী পাতাসহ অনেক নামের কয়েল পাবেন, যেগুলোর সরকারি অনুমোদন নাই। আমরা সরকারি অনুমোদন ছাড়া কোনো কয়েল বিক্রি করি না।’
মশার কয়েল চীন থেকে আমদানি হয় কিনা জানতে চাইলে বোরহান বলেন, ‘চায়না থেকে কোনো মশার কয়েল আসে না। সেখান থেকে কয়েলের কাঁচামাল আসে। এই কাঁচামাল দিয়ে ঢাকায় তৈরি করা হয় চায়না কয়েল।’
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রুমে মশার ওষুধ স্প্রে করার কিছুক্ষণ পরে আবার মশা আসে। ঘরের বাইরে যেখানেই যাই, মশা আর মশা। সন্ধ্যা লাগার সাথে সাথে ঘরের জানালা আটকালে মশা একটু কম আসে। ঘরে-বাইরে সবখানে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।’
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশার নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘এ বছর ফেব্রুয়ারিতে মশার ঘনত্ব বেড়েছে চার গুণ। তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রজাতির মশা কীটনাশক ও প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে তাদের জিনগত পরিবর্তন করে থাকে। যে কীটনাশক এখন দেয়া হচ্ছে বা বিগত দুই থেকে তিন বছর ধরে দেয়া হয় সেটার বিরুদ্ধে মশা সহনশীলতা তৈরি করে ফেলে। এটাকে ইনসেক্টিসাইড রেজিস্ট্যান্স বা কীটনাশক সহনশীলতা বলা হয়। একটা সময়ে এটা এদের জিনগত সহনশীলতায় পরিবর্তন নিয়ে আসে, যা পরবর্তী প্রজন্মেও ট্রান্সফার হয়। এ কারণে মশার ওষুধ আর কাজ করছে না।’
মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ সুপার মার্কেটে খুচরা মশারি বিক্রি করেন মো. কামাল। শহরে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তার দোকানে মশারি বিক্রি বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘শহরে মশার বড়ই উৎপাত। এই সিজনেই মশারি ভালো বিক্রি হয়। বছরের অন্য সময় বিক্রি খুবই কম। ১২০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৫০ টাকা মূল্যের মশারি আছে আমার দোকানে। এখন প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ পিস মশারি বিক্রি করি। বছরের অন্য সময় মাসে ১০ থেকে ১৫ পিস বিক্রি হয়।’
মশারির ধরন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘সাত থেকে আট ধরনের মশারি আছে তার দোকানে। দামি মশারির ভেতরে বাতাস ভালো ঢোকে।’
কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানি রিপন শেখ বলেন, ‘নানা রকম পণ্যের পাশাপাশি তারা মশার উপকরণ বিক্রি করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন মশার কয়েলের চাহিদা বেশি।’
মশা মারার উপকরণের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মশা মারার স্প্রে ছোটটা ১৮০ টাকা, মাঝারিটা ৩০০ টাকা আর বড়টা ৪৫০ টাকায় বিক্রি করেন। ইলেকট্রনিক স্প্রে মর্টিন দেড়শ থেকে ২৩০ টাকা। মর্টিনের লিকু্ই রিফিল ১০০ থেকে ১৩৫ টাকা দাম।’
রায়ের বাজার এলাকার ফার্মেসি ব্যবসায়ী মিলন বলেন, ‘মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া জন্য ওডোমসের চাহিদা বেড়েছে। তবে দাম বাড়েনি। ছোট ওডোমস ৫০ টাকা, বড়টা ৮০ টাকা।’