দুই সপ্তাহের মধ্যে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে আনার নিশ্চয়তা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর পান্থপথে অন্তবর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র- এসটিএস উদ্বোধন শেষে এ নিশ্চয়তা দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা কিউলেক্স মশার আবাসস্থল খাল ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা শুরু করেছি, সেই সঙ্গে মশা মারতে নতুন কীটনাশক আনা হচ্ছে। নগরবাসী আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই এর ফল পাবেন।’
এসটিএস উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
মশার প্রকোপ নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি জানি মশার কারণে নগরবাসী অতিষ্ঠ। খাল-বিল, ঝোপঝাড় পরিষ্কার হলে মশার প্রকোপ কমে আসবে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।’
রাজধানীতে মশার পরিমাণ গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কয়েক গুণ বেড়েছে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণ মানুষও বলছেন, তারা এবার অন্যবারের চেয়ে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এর থেকে পরিত্রাণ চান তারা।
রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণে গত নভেম্বরে ঘটা করেই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করে দুই সিটি করপোরেশন। তখন বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে মশার প্রজননস্থল শনাক্ত করে জরিমানা করে কর্তৃপক্ষ। তখন শুল্কমুক্ত কীটনাশক ও অন্য ওষুধ আনার ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তোড়জোড়ও করেছে। কিন্তু তার চার মাস পরেই ঢাকায় মশার উপদ্রব কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ ঢাকার মানুষ: সাইফুল ইসলাম
মশা বাড়ার কারণ হিসেবে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন যে মশা আছে, সেটা হচ্ছে কিউলেক্স মশা। যখন অনেক দিন বৃষ্টিপাত হয় না, তখন এই মশার আধিক্য দেখা যায়। বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে পানির ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। আর পানিতে অর্গানিক ম্যাটারের (জৈবকণা) পরিমাণ বেড়ে যায়। এই অর্গানিক ম্যাটার কিউলেক্স মশার খাবার। খাবার ও বাসস্থানের সুবিধার কারণে এই সময়ে এই মশার পরিমাণ বেশি হয়।’
বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে পানি বিভিন্ন জায়গায় স্থবির হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেসব জায়গায় এমন পানি জমে আছে, সেখানে কিউলেক্স মশার আধিক্য বেড়ে গেছে।
‘শীতের পরে যে তাপমাত্রা বাড়ে তা কিউলেক্স মশার প্রজননের জন্য ভালো সময়। এ সময় ব্যাপক প্রজনন হয়ে থাকে।’
কবিরুল বাশার জানান, ‘প্রতি বছর মার্চ আর ফেব্রুয়ারিতে এই কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। তবে এবার একটু বেশি বেড়েছে। আমি এক মাস আগে এটার একটা অনুমান দিয়েছিলাম।’
তিনি তার নিজের করা গবেষণায় দেখেছেন, রাজধানীতে গত এক বছরে মশার ঘনত্ব বেড়েছে চার গুণ। প্রতিবছর যেখানে গবেষণায় প্রতি ইউনিটে মশার লার্ভার গড় ঘনত্ব থাকে ১৫ থেকে ২০, এবার সেখানে তা ৫০-এ দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারি থেকেই এটি বাড়তে শুরু করে আর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। যদি ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে এটি আরও বাড়তে থাকবে বলেও জানান তিনি।
এসটিএস উদ্বোধনে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত বছর ডেঙ্গু রোগ আমাদের মাথাব্যথার কারণ ছিল। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে আমরা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছি। এখন কিউলেক্স এবং অ্যানোফিলিস মশা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এই মশাগুলো ডেঙ্গুর মতো এত বিপজ্জনক কিছু নয়, এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই।’
এর আগে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পান্থকুঞ্জ পার্কের বক্স কালভার্ট পরিদর্শন শেষে পান্থকুঞ্জে নতুন এসটিএস উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।