রাজধানীর মালিবাগের হলি লাইফ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মঙ্গলবার এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে।
স্বজনদের অভিযোগ, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার নাম ইয়াসিন মিয়া। বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে। ঢাকায় মেরুল বাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্ট রোডে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ইয়াসিনের বাবা মাসুম মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে পান-বিড়িসহ কোনো নেশাই করত না। আমার ছেলেকে ভর্তি করছি কারণ, ও আমার কাছে একটা মোটরসাইকেল আবদার করছিল। তাকে একটা পালচার মোটরসাইকেল দেয়া হয়েছিল। ওটা বিক্রি করে আরেকটা কিনতে চাইছিল। আমি বলছিলাম এখন থাক, রমজানের ঈদে কিনে দিবনে। তখন আমার ছেলে বলে না দিলে কিন্তু আমি আত্মহত্যা করতে পারি। তখন আমি তাকে হলি লাইফে দিই। ভাবছিলাম, আমার ছেলে ভুলভাল কিছু করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখে সেখানে ভর্তি করি। হলি লাইফে মাদকের চিকিৎসার পাশাপাশি কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়। এ কথা জানার পর আমি তাকে সেখানে ভর্তি করি। কিন্তু এরপর আর কোনো দিন তার লগে দেখা করতে দেয়নি। গত বৃহস্পতিবারও আমি গেছিলাম। কিন্তু আমার ছেলের সাথে দেখা করতে দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে হলি লাইফ থেকে আমায় ফোন দিছে। বলছে, আপনার সাথে একটু আলাপ আছে। সেখানে গিয়ে দেখি আমার ছেলেকে সিঁড়ি দিয়ে নামাচ্ছে। সেখানের এক হুজুর বলে, আপনার ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সমস্যা নাই জ্ঞান আছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আইসিউতে রাখতে হবে।’
‘তখন হাত দিয়া দেখি আমার ছেলের শরীর শক্ত হয়ে গেছে। আমি বলি, আপনারা আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছেন।’
হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, তারা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ যাচাইবাছাই করছেন। সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ইয়াসিন একটি গামছা নিয়ে বাথরুমে ঢুকছেন। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। তবে তদন্ত করলে জানা যাবে আসল ঘটনা। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ইয়াসিনের গলায় যে দাগ পাই, সেটা ফাঁসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। সেখান থেকে আমরা আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে রিপোর্ট এলে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পারব। তা ছাড়া তার শরীরে আমরা কিছু আঘাতের চিহ্ন পাই। এই আঘাতের চিহ্নগুলো আমরা পর্যালোচনা করে বলতে পারব কী হয়েছিল।’