বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভিসি কলিমউল্লাহর অনিয়মের প্রমাণ ইউজিসির তদন্তে

  •    
  • ২ মার্চ, ২০২১ ২১:২৬

‘রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রধান এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশেষ ওই উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকার জন্য বর্তমান উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে এই দায় দায়িত্ব অবশ্যই বহন করা উচিত।’

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারে পাওয়া ‘বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে’ উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত কমিটি।

একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির সদস্য মঞ্জুর কাদেরকে অব্যাহতি দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় কমিটি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে একনেকের এক বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একটি হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের জন্য বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. জলিল মিয়ার আমলে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রীদের হল ১০ তলা করা এবং সেখানে সব ধরনের সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখার নির্দেশ দেন।

একইভাবে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটকেও আধুনিক মানসম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে আধুনিক যুগোপযোগী নকশা তৈরি করে প্রকল্পটি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূর-উন-নবীর আমলে অনুমোদন দেয়া হয়। তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

এই দুটি স্বতন্ত্র ভবন নির্মাণের জন্য ৭৮ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ‘শেখ হাসিনা’ ছাত্রী হলের ১০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি। এর ব্যয় ধরা হয় ৫১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল। ছবি: নিউজবাংলা

ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য একটি ভবন নির্মাণের চুক্তি মূল্য দেয়া হয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি এবং কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট।

আর প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

অবশিষ্ট টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইলেক্ট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কম্পিউটার ল্যাবের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী।

উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেয় ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন ও আব্দুস সালাম কনস্ট্রাকশন।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেড যৌথভাবে অংশগ্রহণকারী কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশ ও নকশা অনুযায়ী একতলার ছাদ পর্যন্ত কাজ হয়।

২০১৭ সালের ১৪ জুন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকে।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা গেছে, একনেকে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য ৯ হাজার স্কয়ার ফুটের মধ্যে ১০ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হলেও ১০ হাজার ৬৬৭ দশমিক ৮৭ ফুট জায়গায় কাজ নেয়া হয়েছে। একটি ভবনের জায়গায় করা হচ্ছে তিনটি ভবন।

এই তিন ভবনের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ভবন ১০ তলা, একটি আবাসিক ভবন ১০ তলা এবং একটি দোতলা কনফারেন্স ভবন। প্রতিটি ভবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। যা অনিয়ম ও নকশা পরিবর্তন বলছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।

অন্যদিকে, ১০ তলা ‘শেখ হাসিনা’ হলের অনুমোদন দেয়া হলেও জায়গা নির্ধারণ করা হয় ১৭ হাজার স্কয়ার ফুট। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ১৭ হাজার ৮৬৫ দশমিক ৫৯ স্কয়ার ফুট এলাকা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্র্যাউন্ড ফ্লোর ২ হাজার ৯২৭ দশমিক ৫০, প্রথম ফ্লোরে ১ হাজার ৯০৮ দশমিক ১৯, দ্বিতীয় থেকে নবম ফ্লোরে ১২ হাজার ৯১৯ দশমিক ৩৬ এবং ফায়ার অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ফ্লোর ১০১ দশমিক ৫৪ স্কয়ার ফুট।

এ দুই ভবনের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর একেএম ড. নূর-উন-নবীর সময়। কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তর ঠিক থাকলেও পরিবর্তন করা হয় নকশায়।

নতুন নকশা করা হয়েছে বর্তমান উপাচার্যের আমলে। এগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ এনেছে তদন্ত কমিটি।

ভিসির স্বৈরতান্ত্রিক নির্দেশনার প্রতিবাদে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে ৯ ফেব্রুয়ারি মৌন মিছিল করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের মূল আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভবনের কাজ যখন একতলা হয়, তখন বর্তমান উপাচার্য যোগ দেন। অনেকবার দেখা করতে গিয়েও আমি তাকে পাইনি। আমাকে তারা কোনো চিঠিও দেননি। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমাকে বলেন আপনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ থমকে আছে।

আমি অবাক হয়ে যাই। এরপর তারা একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে বলা হয় আপনি ৬ তারিখে দেখা করবেন। কিন্তু চিঠিটি ৬ তারিখই পোস্ট করা হয়। এরপর দেখা করতে গেলে বলেন আপনাকে লাগবে না। আমরা মঞ্জুর কাদের নামের একজনকে নিয়োগ দিয়েছি।

‘কিছুদিন পর মঞ্জুর কাদের আমাকে কাজ ছাড়তে চাপ প্রয়োগ করেন এবং বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আদিষ্ট হয়ে বলছি, আপনি কাজে অপারগতা প্রকাশ করেন। আমি করিনি।’

মনোয়ার হাবিব আরও বলেন, বর্তমান যে নকশায় ছাত্রীদের জন্য হল নির্মাণ করা হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার বাইরে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইছিলেন ছাত্রী হলের প্রতিটি ফ্লোরে যেন রান্নাঘর থাকে, মেয়েরা যেন রান্না করতে পারে, পারলার থাকে। কিন্তু বর্তমানে মঞ্জুর কাদের সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে টয়লেটনির্ভর হল তৈরিতে নকশা করেছেন। কারণ প্রতিটি রুমের সঙ্গেই একটি করে বাথরুম। সব আলো-বাতাস বন্ধ হয়ে যাবে। করিডোরে কোনো ভেন্টিলেশন নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আমিনুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য ড. একেএম নূর-উন-নবীর আমলে শুরু হওয়া দুটি উন্নয়নকাজের জন্য পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডকে।

মনোয়ার হাবিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজে কোনো সহযোগিতা করেননি। দুবার চিঠি দেয়ার পরও সহযোগিতা না পাওয়ায় তার কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে।

এরপর ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির দ্বিতীয় পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেডকে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের।

তিনি বর্তমান উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে জানতে মঞ্জুর কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুমোদিত ভবন দুটির জন্য ভিভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপির) যে নকশা রয়েছে, বর্তমানে সেই নকশার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভবনে নির্মাণ ব্যয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ধরা হয় ৬১ কোটি টাকা। আর ৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১০৭ কোটি টাকা ।

ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশে ভিসি কলিমউল্লার নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবিতে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রগতিশীল ছাত্র সংঠনের প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন। ছবি: নিউজবাংলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে যে এরিয়াজুড়ে ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ ইনস্টিউিটটের কাজ হচ্ছে, এগুলো সাবেক উপাচার্য ড. নুর-উন-নবী স্যারের আমলে ভিত্তি দেয়া। সেই ভিত্তির ওপরই কাজ করা হচ্ছে। নতুন করে কোনো ভিত্তি দেয়া হয়নি। তবে কিছু নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, কাজের ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ৯৭ কোটি ৫০ লাখের যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৫৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি টাকা এখনও আছে।

তিনি বলেন, ‘যে নকশা অনুযায়ী ভবনগুলো হচ্ছে, তাতে নতুন করে অর্থের প্রয়োজন হবে। এই অর্থের জন্যই মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে নতুন করে কোনো অর্থই আমরা পাইনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের নানা অসংগতি নজরে এলে ইউজিসিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বরে শিক্ষাসচিবের সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) মিটিংয়ে নতুন নকশার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। সেখানে শিক্ষাসচিব তখনই জানান, প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে। ইউজিসি তদন্ত করবে। ওই প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হবে। সে কারণে কাজ বন্ধ আছে।

মঞ্জুরী কমিশন গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান এবং অতিরিক্ত পরিচালক ড. দুর্গা রানী সরকার।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শনে আসে তদন্ত কমিটি। পরিদর্শনকালে তারা বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন স্থাপনাসহ প্রকল্পের কাগজপত্রাদি যাচাই করেন।

ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছি, তাদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে।’

তদন্ত কমিটি যা সুপারিশ করেছে

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট ভেঞ্চার অব আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব অ্যান্ড প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা না করে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেডকে নিয়োগ দিয়েছেন। যা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৬, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ২০০৮ এবং প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চুক্তির নিয়মাবলির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে কমিটি মনে করে।

প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের করা শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জন্য প্রকৃত নকশা বা ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন। তা ছাড়া ইতিমধ্যে ভবনটির অর্ধেকের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই এখানে দ্বিতীয় ড্রয়িং বা ডিজাইনের কোনো ধরনের প্রয়োজন আছে বলে কমিটি মনে করে না।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মূলধন ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ সম্পন্ন করা উচিত। সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অযাচিতভাবে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ দেয়া হয়; যা সরকারি ক্রয় পদ্ধতি নিয়মবহির্ভূত। এ ধরনের অনৈতিক কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

স্বাধীনতা স্মারকের অসমাপ্ত কাজ কীভাবে সম্পন্ন করা হবে, তার সুষ্ঠু সমাধান মূল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিবই করতে পারবেন।

বর্তমানে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ওয়ার্কস কমিটির সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান উপাচার্যের মনোনীত আছেন।

এ সময় দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেড ভবন সংশোধিত ড্রইং বা ডিজাইন প্রণয়ন করে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক উপাচার্যের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন। এই সময়ে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদের পরিকল্পনা উন্নয়ন, ওয়ার্কস কমিটির সদস্য থাকা সত্ত্বেও এ রকম একটি অগ্রহণযোগ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ ড্রয়িং বা ডিজাইন অনুমোদিত হয়েছে। তাই তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদেরকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রয়োজন।

দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দুটি ভবনের যথাক্রমে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড্রয়িং বা ডিজাইনের এরিয়া এক হলেও, আরডিপিপিতে দুটি ভবনের অতিরিক্ত এরিয়ার অনুকূলে অর্থ প্রাক্কলন করে প্রকল্প পরিচালক ও উপাচার্যের স্বাক্ষরসহ ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। দুটি ভবনের এরিয়া এক থাকলেও অতিরিক্ত এরিয়া ও অতিরিক্ত প্রাক্কলন ব্যয়সহ আরডিপিপি প্রণয়ন করা নৈতিক বিচ্যুতি।

যেহেতু প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিবের ডিজাইনের ওপর তিনটি অবকাঠামো নির্মাণ চলমান, তাই তার এবং উক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে অবশিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করা যেতে পারে।

শেখ হাসিনা হলের অনুমোদিত নকশা। কিন্তু পরে তা পরিবর্তন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে অবহেলা, দীর্ঘসূত্রতা, অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা বর্তমান প্রশাসনের অনৈতিকতা, অদক্ষতা এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছা- অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ও শিক্ষা গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রধান এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকার জন্য বর্তমান উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে এই দায় দায়িত্ব অবশ্যই বহন করা উচিত।

এসব অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মোবাইল ফোন ধরেননি।

এ বিভাগের আরো খবর