করোনা মহামারির মধ্যে মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান আর করোনার টিকায় টাকা লাগবে। তাই যেসব খাতে এখন বরাদ্দ না দিলেই নয়, সেগুলো আপাতত স্থগিত থাকবে।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন, ভ্যাকসিন কিন্তু আমরা কিনেছি। আমাদের কিন্তু সামনে আরও নিতে হবে। কারণ, ১৬ কোটির কাছাকাছি ১৭ কোটির উপরে আমাদের দেশের মানুষ।
‘তার মধ্যে আমাদের প্রত্যেক স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী থেকে শুরু করে আমাদের বিভিন্ন সেক্টর যারা মানুষের জন্য কাজ করে সবাইকে আমরা ভ্যাকসিনটা আগে দিতে চাই গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত। সেজন্য এসব ক্ষেত্রে এই মুহূর্তেই খুব বেশি বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের টাকা কিছু রাখতে হবে। আরও ভ্যাকসিন কিনতে হবে। আমি আবারও বলব মানুষের খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেদিকেই আমরা বেশি জোর দিতে চাই।
‘এখানে যে যে মন্ত্রণালয়ের আপনারা যারাই অতিরিক্ত চাইবেন, আমার মনে হয় এখন আর চাওয়ার সময় ও রকম নাই। তবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে যখন যেটুকু দরকার, হয়ত সেটুকু ব্যবস্থা করা যেতে পারে, সেটা আমরা করে দেখব।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কারও কাছে হাত না পাতার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তবে আমি মনে করছি যে অনেক হিসেব নিকেশ করে। আর আমাদের তো অর্থেরও প্রয়োজন হবে সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
‘আর আমরা কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কারও কাছে কিন্তু হাত পাতব না। আমাদের যা করতে হবে নিজেদের করতে হবে। আমরা নিজেরা করব আর মর্যাদা নিয়ে বাঁচব, সেটা মনে রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের চিন্তা-ভাবনা সেভাবেই থাকতে হবে।
‘আমরা এখন একটা মর্যাদা নিয়ে বিশ্বে চলব। অর্থাৎ বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে আমরা চলব। আমাদের যে সম্পদ আছে, সে সম্পদ নিয়েই আমরা আমাদের দেশ গড়ে তুলব। যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করব।’
গত শুক্রবার রাতে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি। আর এই উত্তরণ শেষ হবে ২০২৬ সালে।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের আলোচনা করতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজের অঙ্গীকার তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে মনে হয় শুধু একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছি। সেটা হলো বাংলাদেশকে আমার বাবা যে স্বাধীন করে দিয়ে গেলেন, এ স্বাধীনতার সুফল যেন সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারে।
‘মানুষ যেন একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারে, এটা তিনি সবসময় বলতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একটাই কথা ছিল, আমার দেশের মানুষ খাদ্য পাবে, বস্ত্র পাবে, উন্নত জীবন পাবে। অর্থাৎ মৌলিক চাহিদাগুলো পূর্ণ হবে। মানুষ একটু ভালো থাকবে। শোষিত, বঞ্চিত মানুষগুলো বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তার কথা স্মরণ করেই সবকিছু ছেড়ে দিয়ে একটা বিষয়েই নজর দিয়েছিলাম যে, এই বাংলাদেশকে কীভাবে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।’