একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) হেয় অপদস্থ করতে মাহবুব তালুকদার সবই করছেন বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে মঙ্গলবার ‘জাতীয় ভোটার দিবসের’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে হেয়, অপদস্থ ও নিচে নামানোর জন্য নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার যা করা দরকার, সবই করে চলেছেন।’
নূরুল হুদার নেতৃত্বে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে পাঁচ সদস্যের বর্তমান ইসি। ২০২২ সালে শেষ হবে তাদের মেয়াদ। চার কমিশনারের মধ্যে মাহবুব তালুকদার শুরু থেকেই নানা বিষয়ে কমিশনের অন্যদের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন।
বিভিন্ন নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর মতোই মন্তব্য দেখা যায় মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি করা মাহবুব তালুকদারের। তার ভাষায়, নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হচ্ছে না, সব পক্ষ সমান সুযোগ পাচ্ছে না।
ভিন্নমত দিয়ে বারবার আলোচনায় আসা মাহবুব সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান, দেশের প্রয়োজনে পদত্যাগে প্রস্তুত আছেন তিনি। বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগ করলে যদি লাভ হয়, দেশের যদি কোনো উপকার হয়, তাহলে আমি যেকোনো মুহূর্তেই পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।’
জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে লিখিত বক্তব্যেও বর্তমান ইসির সমালোচনা করেন মাহবুব তালুকদার। বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর সাংবিধানিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না পারলে আমরা গণতন্ত্র অস্তাচলে পাঠানোর দায়ে অভিযুক্ত হব।’
জাতীয় ভোটার দিবসে বক্তব্য দিচ্ছেন ইলেকশন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ছবি: নিউজবাংলা
কমিশনার মাহবুব তালুকদারের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জনসমক্ষেই তার সমালোচনামুখর হলে সিইসি নুরুল হুদা। বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার সাহেব অভ্যাসগতভাবে সারা জীবন আমাদের এ নির্বাচন কমিশনে যোগ দেয়ার পরদিন থেকে যা কিছু ইসির নেগেটিভ দিক তা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পাঠ করতেন। আজকে এর ব্যতিক্রম হয়নি।’
ভোটার দিবস উপলক্ষেও তিনি একটা রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে তিনি কাজ করেন না; ব্যক্তিস্বার্থে ও একটা উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য এ কমিশনকে অপদস্থ করার জন্য যতটুকু যা করা দরকার, যখন যতটুকু করা দরকার ততটুকু করেছেন উনি।’
সিইসি জানান, এ নির্বাচন কমিশনে যিনি যোগদান করেছেন, যতগুলো সভা হয়েছে সব সময় এটা করতেন। আর একটা বছর আছে, তা তিনি বলতে থাকবেন।
‘ভেবেছিলাম ভোটার দিবস হিসেবে তিনি কিছু বলবেন; কিন্তু তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য রাখলেন। ইসিকে কতখানি হেয় করা যায়, কতখানি নিচে নামানো যায়, অপদস্থ করা যায় তা তিনি করে চলেছেন।’
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে স্বাধীনভাবে মাহবুব তালুকদার কাজ করতে পারেন বলেও জানান সিইসি। বলেন, ‘তিনি দেশের স্বার্থে, নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে কাজ করেন না। তিনি কাজ করেন নিজের স্বার্থে। উনি নিজে বই লেখেন। তাই এখান থেকে, ওখান থেকে, ডাস্টবিন থেকে কাগজপত্র টুকে, জোড়াতালি দিয়ে একটা কিছু দাঁড় করান। ভুলত্রুটি খোঁজেন।’