রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মাস্টার রোলে চাকরি হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের দুজনের। সোমবার সকালে তারা কাজে যোগ দিয়েছেন।
তাদের একজন হলেন মারুফ। তিনি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেক্ট্রো মেডিক্যালে ডিপ্লোমা করেছেন। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় ভালো কোনো কাজ পাচ্ছিলেন না। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মারুফকে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেয়া হয়েছে।
আরেকজন হলেন জনি হোসেন জনি। অষ্টম শ্রেণি পাস জনি চাকরি পেয়েছেন অফিস সহায়কের। তাদের দুজনকেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখায় দেয়া হয়েছে।
গত শনিবার নিজের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক তৃতীয় লিঙ্গের দুজনকে চাকরি দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ ওই সভার আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, দিনের আলো হিজড়া সংঘ যে দুজনকে চাকরির জন্য সুপারিশ করবে, তাদের সুযোগ দেয়া হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যতদিন পর্যন্ত তাদের স্থায়ী করা না যাবে, ততদিন তারা জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বেতন পাবেন।
এরপর দিনের আলো হিজড়া সংঘ জনি ও মারুফের নাম প্রস্তাব করে। রোববার তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন।
চাকরি পেয়ে নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার বাসিন্দা মারুফ বলেন, ‘আমি ইলেক্ট্রো মেডিক্যালে পড়াশোনা করলেও কম্পিউটারের কোর্স করেছি। এখানে নতুন চাকরিতে এসে খুব ভালো লাগছে। প্রথম দিনই আমার খুব ভালো লাগছে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতাম। আমার মেয়েলি আচরণের কারণে বাকিরা হাসাহাসি করত। কাজের পরিবেশই নষ্ট হতো। তাই একটি ইস্যু তৈরি করে তারা আমাকে বাদ দেয়। করোনার মধ্যে বসেই ছিলাম।’
জনি হোসেন বলেন, ‘খাতাপত্র কোথায় কোথায় নিয়ে যেতে হবে, সেগুলো আজ বুঝে নিলাম। পাশাপাশি কিছু নাশতা-পানি নিয়ে যাওয়া আসার কাজ করেছি।’
তিনি কলেন, ‘কখনও খেয়ে কখনও না খেয়েই দিন চলে গেছে। এখন চাকরি পেয়ে কতটা ভালো লাগছে, সেটা ভাষায় প্রকাশ কারতে পারব না। চাকরিতে যে আমি আছি, আসলেই এটি সত্যি না স্বপ্ন দেখছি, তা বুঝতেই পারছি না।’
দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা হোক। জনি ও মারুফের চাকরির মাধ্যমে এই প্রথম সরকারি অফিসে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের যাত্রা শুরু হলো। এটি একটি মডেল হিসেবে কাজ হবে। আমার চাই এটি দেখে এখন থেকে সব অফিস এইভাবে আমাদের যাদের যোগ্যতা আছে, সেই অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করুক।’
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘দুজনকে আমার অফিসে মাস্টার রোলে নিয়োগ দিলাম। রাজশাহীতে প্রকৃত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্যদের শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে তাদের যোগ্যতানুসারে বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।’