বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইন্দো-প্যাসেফিক সামরিক জোট: যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে অনীহা ঢাকার

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২১ ২২:০৭

যুক্তরাষ্ট্রে চার দিনের সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের পর নিজেদের কোনো শত্রু নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা আপাতত উন্নয়ন, জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই বাসস্থান ও বস্ত্রের নিশ্চয়তায় অধিক মনোনিবেশ করতে চায়।

জাপানের উদ্যোগে গঠিত ‘ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসেফিক’ সামরিক জোটের সদস্য হতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে অনীহা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রে চার দিনের সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের পর নিজেদের কোনো শত্রু নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা আপাতত উন্নয়ন, জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই বাসস্থান ও বস্ত্রের নিশ্চয়তায় অধিক মনোনিবেশ করতে চায়।

মোমেন বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন আমার সঙ্গে ইন্দো-প্যাসেফিক নিয়ে কোনো আলাপ করেননি। তবে হোয়াইট হাউজের একজন ডেপুটি সেক্রেটারি আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেন, ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চান।

‘মার্কিন ওই কর্মকর্তা আমাকে বলেন, তারা ইন্দো-প্যাসেফিক ইস্যুতে সিকিউরিটি নিয়ে একটা আঁতাত করতে চান। নিরাপত্তার স্বার্থেই বাংলাদেশের সেই জোটে যোগ দেয়া উচিত বলেও তিনি আমাকে বলেন। আমি তাকে বলেছি, দেখেন আমরা এখন সিকিউরিটি নিয়ে ভাবছি না। আমরা এখন আছি উন্নয়ন নিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, স্থায়ী বাসস্থান, মানসম্পন্ন কাপড়ের নিশ্চয়তা নিয়ে কাজ করছি। আমরা প্রশাসনের ডিসেন্ট্রালাইজেশনের মাধ্যমে জনগণের কাছে সঠিক সেবা ও উন্নয়ন পৌঁছে দিতে চাই। তাছাড়া সব দেশই তো আমাদের বন্ধু। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভালো। আমাদের তো কোনো শত্রুই নেই।’

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়েই এই জোটে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানান জোটের উদ্যোক্তা দেশ জাপান।

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ভারত ও অস্ট্রেলিয়া এই জোটের প্রাথমিক সদস্য। জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য এ জোটে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

২০২০ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী এডওয়ার্ড বিগান বাংলাদেশ সফরে এসেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই জোটে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।

নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য চায় ঢাকা

সংবাদ সম্মেলনে মোমেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে আরও এক দফা সে দেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের জলবায়ু বিষয়ক প্রধান দূত জন কেরির কথা হয়েছে। তিনি আমার কাছে জলবায়ু ইস্যুতে আবারও আমাদের পার্টনার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে আমার মতামত চান। আমি তাকে স্বাগত জানিয়েছি।

‘আমি তাদের সব এলডিসিভুক্ত দেশের পাশে দাঁড়াতে বলেছি। বলেছি, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা সাড়ে ১১ মিলিয়ন নতুন গাছ লাগাচ্ছি। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো লস অ্যান্ড ডেমেজ। আমাদের এখানে প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা হয় গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে। আমরা এই দুর্যোগের জন্য দায়ী নই। এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর বিকল্প বাসস্থানের জন্য তাদের বলেছি, তোমরা এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারো।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তবে কেরি সাহেব বলেছেন, এটা সেল করা (বোঝানো) কঠিন হয়ে যাবে। আমি বলেছি, নদী ভাঙ্গনের জন্য আমরা দায়ী নই; দায়ী গ্লোবাল লিডাররা। তখন তিনি বলেন, এ জন্য পয়সা দিতে হয়তো জি-৮ সদস্যরা রাজী হবেন না। তখন আমি বলেছি, এ জন্য তো আপনি আছেন। আপনি তাদের রাজী করাবেন; দায়িত্ব আপনার।

‘আমি বলেছি, জাতিসংঘ বলেছিল প্রতিবছর তারা জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড সরবরাহ করবে। এটার চেহারা তো আমরা এখনও দেখছি না। আপনি এলডিসির দেশগুলোর জন্য সেটার ব্যবস্থা করেন। তখন তিনি বলেন, ওকে আব্দুল। আই ডু ইট। আমি ১০০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড নিশ্চিতের জন্য কাজ করব।’

যুক্তরাষ্ট্রকে ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরির কারখানা করার প্রস্তাব

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে আমেরিকার একজন সিনেটর কথা বলেন। তিনি আমাকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগ দিতে বলেন। আমি তাকে বলেছি, আমাদের দেশ হলো বিশ্বের প্রধান একক ইউনিট সোলার প্যানেল ব্যবহারকারী দেশ। আমরা প্রায় পাঁচ লাখ পরিবারকে এটা সরবরাহ করেছি। কিন্তু এটা অনেক ব্যয়বহুল।’

তখন তিনি ইলেক্ট্রিক গাড়ি ব্যবহারের কথা বলেন জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘আমি বলেছি, আপনি আমাদের একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি বানানোর ইউনিট দেন। না হয় টাকা–পয়সা দেন। তখন তিনি জানতে চান কতো টাকা লাগবে। আমি বলেছি, টাকা-পয়সা লাগবে না।

‘আপনি আমেরিকান একটি কোম্পানিকে পাঠান। গাড়ি তৈরির ইউনিটের ব্যবস্থা করেন। আমাদের সস্তা লাকবল আছে। আকর্ষণীয় বাজার আছে। পাশে ভারত, আসিয়ানসহ অন্যান্য বাজারও আছে। আমাদের হার্ড ওয়ার্কিং, কুইক লার্নার লেবার আছে। তিনি এতে রাজি হয়েছেন।’

‘কয়েকজন’ রোহিঙ্গা নিতে চায় আমেরিকা

সংবাদ সম্মেলনে মোমেন বলেন, সফরে একজন সিনেটর তাকে বলেন, তার সংসদীয় এলাকায় কয়েকজন রোহিঙ্গা আছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা কুতুপালং আছে। তারা তাদের আমেরিকায় আনতে চান।

‘আমি বললাম, অবশ্যই। কবে আনবেন বলেন। আমি পাঠায়ে দিব। তবে এও বলেছি, ১০/১২ জন নিয়ে লাভ নেই। আপনাদের এখানে প্রতি কিলোমিটারে ৪০ জন বাস করে। কুতুপালংয়ে যেখানে রোহিঙ্গাদের রেখেছি, সেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৮৪ হাজার জন বসবাস করছেন।

‘তাই আপনারা কয়েক লাখ নিয়ে আসেন। নিজেরা না পারেন ইউরোপীয়ানদের রাজি করান। সেখানে প্রতি কিলোমিটারে মাত্র ১০/১২ জন বসবাস করে। মানুষের জন্য, মানবিকতার জন্য কিছু করুন।’

তিনি বলেন, ‘আর একজন সিনেটর গ্রেস মং আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাকে আমি বলেছি, তুমি তো অভিবাসী ছিলে। তোমার নিউইয়র্কে আমার অনেক আনডকুমেন্টেড লোক আছে।

‘তারা ভালো আছে এবং ট্যাক্স পে করে। কিন্তু কাগজ না থাকায় দেশে যেতে পারে না। দেশে তাদের অনেকেরই স্বজন-পরিজন, এমনকি স্ত্রী-সন্তানও আছে। এদের কাগজ করে দিয়ে তাদের মনের রানি হয়ে যাও। সে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর