তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ থাকা ব্যাংকার পি কে হালদার যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে প্রথমে ভারত যান। পরে তিনি কানাডায় চলে যান।
আলোচিত সমালোচিত এই ব্যাংকার যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন চিঠি পাঠায় বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তিনি যে সড়ক পথে যশোর হয়ে দেশ ছাড়েন, সেটি পরে জানতে পারে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।আদালতের নির্দেশে সোমবার ইমিগ্রেশন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে এ সব তথ্য জানিয়েছে।
পিকে হালদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠি বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ পায় গত ২৩ অক্টোবর তার দেশ ত্যাগ করার ১২ মিনিট পর বিকেল ৪টায়।
এই চিঠি পাওয়ার ১২ মিনিট আগে অর্থাৎ ৩টা ৪৮ মিনিটে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন পিকে হালদার।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী ১৫ মার্চ এ বিষয়ে শুনানির দিন রয়েছে।
তার আগেই ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়েকে এ তথ্য জানাল।
তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ থাকা ব্যাংকার পি কে হালদার
পি কে হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। পরে এই দুই পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক নিউজবাংলাকে বলেন, প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগ নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কীভাবে পি কে হালদার দেশ ত্যাগ করেছেন তা জানতে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাদের জানিয়েছেন, ২৩ অক্টোবর চিঠি পাওয়ার পর তারা অফিশিয়াল কাজ শেষ করে বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে দেশের সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দরে তার কপি পাঠিয়ে দেন, যাতে পিকে হালদার দেশত্যাগ করতে না পারেন।’
তিনি বলেন, এছাড়া দুদকের চিঠিতে পি কে হালদারের পাসপোর্টের নম্বর দেয়া ছিল না। শুধু নাম দেয়া ছিল। ইমিগ্রেশন ‘সেই বাইনেমেই’ তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, ইমিগ্রেশন পুলিশ বলেছে, ডি কে হালদারের কানাডার আরেকটি পাসপোর্ট রয়েছে। তবে তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়েই বেনাপোল স্থলবন্দর পার হন।
তিনি জানান, আগামী ১৫ মার্চ এ বিষয়ে সব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করবেন। সেই দিন এ বিষয়ে আরও শুনানি হবে।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও পি কে হালদার কীভাবে দেশত্যাগ করলেন তা জানাতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
আদেশে বলা হয়, সেদিন বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরতদের এবং দুদকের দায়িত্বে কে কে ছিলেন তার তালিকা দাখিল করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি বিভাগে ২০০৮ সাল থেকে কর্মরতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও জানাতে বলা হয় আদেশে।
এ আদেশের পর বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর একটি দৈনিকে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে পরদিনই তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেপ্তার করতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে- তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ১৫ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ দেয়।
এর আগে নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। এরপরই বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
পি কে হালদার গত বছরের শেষ দিকে দেশে আসতে চেয়েছিলেন। টাকা উদ্ধারে সহযোগিতা করতে দেশে আসলে যেন তাকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সে জন্য হাইকোর্টে আবেদনও করেন তিনি। পরে দেশে আসামাত্র তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেয় উচ্চ আদালত। পরে তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আর আসেননি।
পি কে হালদারের বেশ কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তাদের ব্যাংক হিসাবে থাকা দেড় হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি ঢাকার উত্তরা, দিয়াবাড়ী, নারায়ণগঞ্জের ভুলতা, নরসিংদীতে ৭১ একর জমি খুঁজে পেয়ে সেগুলোও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একটি ১০ তলা ভবনও এখন হেফাজতে নিয়েছে সরকার।