ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে থাকা কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের জামিন আবেদনের ওপর হাইকোর্টে ৩ মার্চ শুনানি হবে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ সোমবার এ তারিখ দিয়েছে।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন কিশোরের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
পরে বাপ্পী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জামিন আবেদনকারি আইনজীবী শুনানি করতে চাইলে তখন আদালত বলেন, আবেদন তো দুই জনের। তখন আইনজীবী জানান, একজন মুশতাক আহমেদ তো মারা গেছেন। তখন আদালত বলেন, ঠিক আছে এ বিষয়ে আপনি এফিডেফিড (হলফনামা) দেন, ৩ মার্চ শুনানির জন্য রাখি। পরে আদালত ৩ মার্চ শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন।’
অন্যদিকে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা কিশোরের জামিন চেয়ে যে আবেদন করেছিলাম তার শুনানির জন্য ছিল। এরই মধ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মুশতাক আহমেদ কারাগারে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ এখনও জানতে পারিনি। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে শুনেছি। আজকে শুনানিতে বিষয়টি আদালতকে অবহিত করি। আদালত তখন মুশতাক আহমেদের বিষয়টির হলফনামা দিতে বলে ৩ মার্চ পরবর্তী দিন রেখেছে।’
আসামী পক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘জামিন চেয়ে আজকে শুনানিতে এফআইআরের বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরেছি। কিশোরকে র্যাব হেফাজতে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এ কারণে তিনি অসুস্থ। তার ডান কান প্রায় অকেজো হয়ে গেছে বলা চলে। বা পায়ে আঘাত করা হয়েছে সে কারণে তিনি অসুস্থ। আদালতে বলেছি এফআইআরে যাই থাকুক না কেন যদি তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকে তাহলে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাকে জামিন দিতে পারে, সে কারণে এ বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরেছি।’
এর আগে রোববার নতুন করে কিশোরকে নতুন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের করা আবেদন নাকচ করেন ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম।
এ মামলায় প্রায় ১০ মাস কারাগারে আছেন কিশোর, তার সঙ্গে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার মারা যান। এই দুজনই আদালতে ছয়বার আবেদন করেও জামিন পাননি।
সবশেষ মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন হাইকোর্টে নাকচ হয় প্রায় দুই মাস আগে। এরপর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তাদের জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। সেই আবেদনের শুনানি হয় সোমবার।
কিশোর, মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের মে মাসে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। অন্য ৯ আসামি হলেন রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, জার্মানিপ্রবাসী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, হাঙ্গেরিপ্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার।
ওই মামলায় ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয় রমনা থানা-পুলিশ। তবে সেখানে সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বিতর্কিত জুলকারনাইন সায়ের খানসহ (সামি) আট আসামির নাম না থাকায় আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে এই তদন্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন। তবে ২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির উপপরিদর্শক মো. আবসার আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার সময় বাড়াতে আবেদন করেন।
এর দুই দিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি কিশোর ও মুশতাককে নতুন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ দেয়। তবে ওই দিন রাতেই মুশতাক আহমেদ মারা যাওয়ায় রোববার কেবল কিশোরের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।
এ মামলায় কারাগারে যাওয়া আরেক আসামি দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া জামিন পেতে তিনবার আবেদন করেন বিচারিক আদালতে। এরপর তিনি হাইকোর্টে আবেদন করে জামিনে মুক্তি পান। এ ছাড়া আরেক আসামি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন গ্রেপ্তারের চার মাস পর বিচারিক আদালত থেকেই জামিন পান। বাকি আসামিদের সবাই দেশের বাইরে আছেন।