কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও গ্রেপ্তার সাত ছাত্রনেতার মুক্তির দাবিতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়।
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন এই মিছিলে।
মিছিলটি শহীদ মিনার হয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছালে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। এ সময় মিছিলকারীদের ব্যারিকেড সরিয়ে সামনে এগোতে দেখা যায়। পরে বিদ্যুৎ ভবনের সামনে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আবার আটকে দেয়। পরে সেখানেই সমাবেশ করে ছাত্র সংগঠনগুলো।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, ‘আমরা এমন একটি রাষ্ট্রে বাস করছি যে রাষ্ট্র মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধা দেয়। আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়ছি৷ সেই লড়াই থেকে আমাদের সাত সহযোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘আমরা আজকের এই কর্মসূচি থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই গ্রেপ্তার ছাত্র নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি না দিলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে ছাত্রসমাজ।’
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বাংলাদেশে দুঃসাশন চলছে। এর শিকার লেখক মুশতাক। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের সাতজন সহযোদ্ধা গ্রেপ্তার হয়েছে।
‘আজকের পর আমরা আর কোনো বিক্ষোভ করব না। এরপর আমরা তালা ভেঙে ছাত্রনেতাদের মুক্ত করে নিয়ে আসব। ডিজিটাল আইন বাতিল করার জন্য আমরা নিজেদের জীবন দিয়ে দিব। তবুও আমরা এই আইন বাংলাদেশে চলতে দিব না।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর বলেন, “কারাগারে লিখা থাকে, ‘রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ।’ লেখক মুশতাককে কি আলোর পথ দেখালেন জানি না৷ আজ সর্বক্ষেত্রে গেড়ে বসেছে দুঃশাসন। এটি যদি ভাঙতে না পারি তাহলে এ শাসন আরও দীর্ঘায়িত হবে। আমাদের এ নীরবতা ভাঙতে হবে।”
সমাবেশ থেকে খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার শ্রমিক রুহুল আমিনের মুক্তির দাবি জানায় ছাত্রনেতারা।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এই মিছিলকে ফ্যাসিবাদবিরোধী মিছিলে জারি করব। সেই সঙ্গে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দিব।’
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের ডিসি হারুন উর রশীদ বলেন, ‘আজকে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে এসেছিল। আমরা তাদের অনুরোধ করি এখানেই সমাবেশ শেষ করার জন্য।
‘তারা আমাদের অনুরোধের প্রতি সম্মান জানিয়ে এখানেই সমাবেশ শেষ করেছে। এ জন্য তাদেরকে আমরা ধন্যবাদ দিয়েছি।’
মুশতাক আহমেদ গত বছরের মে মাস থেকে কারাবন্দি ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যু হয়। তার বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ছিল।
মুশতাকের মৃত্যুর পর থেকেই বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। এসব সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চেয়েছেন।
লেখক মুশতাককে হত্যার অভিযোগ এনে শুক্রবার রাজধানী শাহবাগ এলাকায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও অন্যান্য বাম সংগঠন মশাল মিছিল বের করে। এতে লাঠিপেটা করে পুলিশ। ওই মিছিল থেকে সাত জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।