ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রোববার কিশোরের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানির সময় তিনি এ অভিযোগ করেন।
এর আগে কিশোরের বড় ভাই আহসান কবিরও একই অভিযোগ করেছিলেন। কিশোরের সঙ্গে কথা বলে তিনি সংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাকে র্যাব হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে। এ কারণে তিনি (কিশোর) দাঁড়াতে বা হাঁটাচলা করতে পারছেন না।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ২০২০ সালের ৬ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় লালমাটিয়ার বাসা থেকে র্যাব-৩-এর সদস্যরা কিশোরকে গ্রেপ্তার করে। এরপর র্যাব সদস্যরা তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন৷ এ নির্যাতনের ফলে কিশোর দুই পায়ের ভেতর ও বাঁ পায়ে আঘাত পান। তিনি এখনও পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেন না।
বিচারকের উদ্দেশে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘র্যাবের এই নির্যাতন ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, যা বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ আদালত এখতিয়ারে নিতে পারেন।’
এই যুক্তি দেখিয়ে কিশোরের নামে করা ওই মামলায় রিমান্ড শুনানিতে আসামিকে সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থাপনের আদেশ চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম আবেদনটি ওই থানার আমলি আদালতে শুনানির পরামর্শ দেন।
এরপর আমলি আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর ছিদ্দিকের আদালতে আবেদনের শুনানি করা হয়৷
শুনানিতে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘কিশোরকে গত মে মাসে গ্রেপ্তারের পর অমানবিক নির্যাতন করেন র্যাব সদস্যরা। নির্যাতনের কারণে তিনি উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলার নিয়মিত তারিখে চিরকুট দিয়ে তিনি এই তথ্য আমাদের জানান।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা করব। এই মামলার বর্তমান আমলি আদালত মহানগর দায়রা জজ।’
আসামি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় তাকে উপযুক্ত আদালতে ভুক্তভোগী ও বাদী হিসেবে জবানবন্দি দেয়ার জন্য উপস্থাপনের আদেশ চান আইনজীবী।
আদালত বলে, যেহেতু তারা সংশ্লিষ্ট আদালতের অধীনস্ত নয়, তাই এমন আদেশ দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। মহানগর দায়রা জজ আদালতে সেই দরখাস্ত করলে সে আদালতই এই মামলার নথি তলব করে আসামিকে হাজিরের জন্য পিডব্লিউ ইস্যু করতে পারবে। এ কথা বলে আদালত আইনজীবীর আবেদন নাকচ করে।
পরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম কিশোরের বিরুদ্ধে করা তিন দিনের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দেন।
কিশোর, মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের মে মাসে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। অন্য ৯ আসামি হলেন রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, জার্মানিপ্রবাসী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, হাঙ্গেরিপ্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার।
ওই মামলায় ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয় রমনা থানা-পুলিশ। তবে সেখানে সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বিতর্কিত জুলকারনাইন সায়ের খানসহ (সামি) আট আসামির নাম না থাকায় আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে এই তদন্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন। তবে ২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির উপপরিদর্শক মো. আবসার আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার সময় বাড়াতে আবেদন করেন।
এর দুই দিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি কিশোর ও মুশতাককে নতুন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ দেয়। তবে ওই দিন রাতেই মুশতাক আহমেদ মারা যাওয়ায় রোববার কেবল কিশোরের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।
এ মামলায় কারাগারে যাওয়া আরেক আসামি দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া জামিন পেতে তিনবার আবেদন করেন বিচারিক আদালতে। এরপর তিনি হাইকোর্টে আবেদন করে জামিনে মুক্তি পান। এ ছাড়া আরেক আসামি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন গ্রেপ্তারের চার মাস পর বিচারিক আদালত থেকেই জামিন পান। বাকি আসামিদের সবাই দেশের বাইরে আছেন।
১ মার্চ হাইকোর্টে মামলাটির জামিন শুনানির জন্য তারিখ রয়েছে।