ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে টিএসসি থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। এরপর শাহবাগ হয়ে, পরিবাগ ঘুরে পৌনে একটার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোনকারীরা।
এ সময় তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ এই আইনে আটকদের এবং শনিবার জোটের মশাল মিছিল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়াদের মুক্তির দাবি জানান নেতারা।
সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। এই আইন বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
‘যে আইন মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চাই সে আইন বাংলাদেশে চলতে পারে না। আমরা ছাত্র সমাজ এই আইনকে লাথি মারছি।’
সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি জঘন্য আইন। আমরা এই আইনের বাতিল চাই। কথা বলা আমার অধিকার। আপনি আমার কণ্ঠরোধ করতে চাচ্ছেন। তার মানে আপনি সংবিধান লঙ্ঘন করছেন।’
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে শুরু থেকেই সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
এই আইনেই গত বছরের মে মাসে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদের বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে মৃত্যু হয়।
ঠিক কী কারণে ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে তা জানতে মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দমন-পীড়নের কারণেই মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে। অবিলম্বে আইনটি বাতিল এবং এই আইনে গ্রেপ্তারদের ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান তারা।
মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ এনে ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এই আইনের বলি হয়ে কারাগারে লেখক মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার দায় প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে৷ এ আইনে যতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয় বলেন, ‘আমাদের মত প্রকাশের অধিকারের ওপরে সরকারি নিপীড়ন নেমে এসেছে। এরই ফল হিসেবে কারাগারে লেখক মুশতাকের নির্মম মৃত্যু। এর বিরুদ্ধে আমরা ছাত্র জনতা মিলে আজীবন লড়াই চালিয়ে যাব।’
মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ এনে শাহবাগেই শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও অন্যান্য বাম সংগঠনের বের করা মশাল মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা এবং গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে।
মশাল মিছিল থেকে আটকদের মুক্তির দাবি জানিয়ে কাদেরী বলেন, ‘অনতিবিলম্বে আটককৃতদের যদি মুক্তি না দেয়া হয়, তাহলে আমরা সারাদেশের ছাত্র সমাজ নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর আগামী ১ মার্চ সারাদেশে বিক্ষোভ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবে বলে সমাবেশ থেকে জানানো হয়।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবার কবির, সাধারণ সম্পাদা দীপক রায় গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের আরিফ মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।