স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত হলো বাংলাদেশ। এই সুসংবাদ নিয়ে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করা উপলক্ষে শনিবার বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে প্রধানমন্ত্রীর এ সংবাদ সম্মেলন।
তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে না। গণমাধ্যমকর্মীরা থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে, আর নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে যুক্ত হবেন সরকারপ্রধান।
গত সোমবার জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য পর্যালোচনা বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে দ্বিতীয় দফায় এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রয়োজনীয় মানদণ্ড বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে কি না, তার আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন করা হয়।
তাতে বাংলাদেশ পাস করেছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিডিপির প্ল্যানারি সেশন শেষে মূল্যায়নে বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও লাওকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়। বাদ দেয়া হয় মিয়ানমারকে।
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যেতে এবার বাংলাদেশের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হবে। এ পর্ব শেষে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে ওঠার সব প্রক্রিয়া শেষ হবে।
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম ওঠাতে মাথাপিছু আয় ধরে রাখতে হয় ১ হাজার ২৩০ ডলার, সেখানে গত বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ২০ ডলার।
মানব উন্নয়নসূচকে পয়েন্ট থাকতে হয় ৬৬, বাংলাদেশের আছে ৭৫.৩ পয়েন্ট। আর অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচকে মান থাকতে হয় ৩২ বা তার কম। এই সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২৫ দশমিক ২।
সিপিডির বৈঠকের আগেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তাসহ বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছিলেন, মোটামুটি নিশ্চিত, দ্বিতীয় দফায়ও এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। তাই হলো।
ক্রমাগত অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। ছবি: নিউজবাংলা
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে আরেকটি মাইলফলক হবে। তবে এই উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি কিছু উদ্বেগও রয়েছে।
কারণ, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর বিশ্ব বাণিজ্যে পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা, সহজ শর্তে এবং কম সুদে ঋণসহ কিছু সুযোগসুবিধা হারাবে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালের মার্চে প্রথম দফায় এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রথম যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।
নিয়ম হচ্ছে, এলডিসি থেকে বের হতে জাতিসংঘের সিডিপির পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পেতে হয়।
স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রস্তুতির জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়। সে অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা বাংলাদেশের।
কিন্তু উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করা এবং করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বাড়তি দুই বছর সময় চেয়েছে বাংলাদেশ। সে হিসাবে ২০২৬ সালে উত্তরণ ঘটবে, অর্থাৎ ওই বছর উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ।