লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যার অভিযোগ এনে রাজধানী শাহবাগ এলাকায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও অন্যান্য বাম সংগঠনের বের করা মশাল মিছিলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এই হামলায় কয়েকজন আহত হন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের সভাপতি আল কাদেরী জয় জানান, তারা মশাল মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগের দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কাছ থেকে মশাল কেড়ে নিয়ে আমাদের দিকে ছুড়ে মারে। আমাদের উপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করা হয়। পেটাতে পেঠাতে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে নিয়ে আসা হয়৷
‘এ সময় আমরা দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে পুলিশ আমাদের দিকে ইট পাটকেল ছোড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেলও ছুড়েছে।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, ‘পুলিশের অতর্কিত হামলায় আমাদের পাঁচ থেকে সাতজন আহত হন। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
মশাল মিছিলে হামলা চালানোর সময় অন্তত চারজন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান দীলিপ।
হামলার ঘটনায় ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিল থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশের হামলার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগ এলাকায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও অন্যান্য বাম সংগঠনের মশাল মিছিল। ছবি: সাইফুল ইসলাম
তবে মশাল মিছিলকারীদের ওপর কোনো হামলা হয়নি বলে দাবি করেন পুলিশের রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশই বরং হামলার শিকার হয়েছে।
‘পুলিশ তাদের ওপরে হামলা করেনি। আন্দোলনকারীদের হামলায় পুলিশের ১০ থেকে ১২ জন সদস্য আহত হয়েছে। আন্দোলনকারীদের নিক্ষেপ করা ইট-পাটকেলে আমি নিজেই আহত হয়েছি।’
আটকের বিষয়ে সাজ্জাদুর বলেন, ‘আমরা কাউকে এ পর্যন্ত আটক করিনি। হামলার সময়ে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। হামলায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন কয়েকজন আন্দোলনকারী। ছবি: নিউজবাংলা
এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় ‘লেখক মুশতাকের হত্যাকারী রাষ্ট্র’ ব্যানারে কয়েকশ প্রতিবাদকারী শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সেখান থেকে সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় গিয়ে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলকারীরা।
এসব দাবি হলো- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, এই আইনে আটকদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং মুশতাকের মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, দাবিগুলোর বিষয়ে ১ মার্চের আগে সরকার থেকে কোনো বক্তব্য না এলে ওই দিন সকাল ১১টায় টিএসসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ে যাবেন তারা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় গত বছরের মে মাসে গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাবন্দি ছিলেন লেখক মুশতাক। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যু হয়।
ঠিক কী কারণে ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে তা জানতে মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়েছে।
লেখক মুশতাক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শাফী মোহাইমেন বলেন, ‘মুশতাকের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
মুশতাকের মরদেহে অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি বলে জানিয়েছেন তার খালাত ভাই চিকিৎসক নাফিস রহমান।
ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একজন চিকিৎসক। আমি ওনার ভাই। আমি পোস্টমর্টেমের সময় ছিলাম। আমি তার মৃত্যু নিয়ে অস্বাভাবিক কোনো কিছু দেখিনি।’
মুশতাকের মৃত্যুর কারণ জানতে প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘যেকোনো মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে হোক বা অ্যাক্সিডেন্টে হোক, একটা পোস্টমর্টেম হয়। পোস্টমর্টেমের পর সঠিকভাবে আমরা বলতে পারব কেন এই মৃত্যুটা হয়েছে। প্রয়োজনবোধে ইনকয়ারি কমিটি করব।’