ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শাফী মোহাইমেন।
তিনি বলেন, ‘মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। দৃশ্যত, গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
মুশতাকের মৃত্যুতে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগারের পক্ষ থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানায় শুক্রবার মামলাটি করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে মুশতাক অসুস্থ হয়ে পড়লে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে রাত আটটার দিকে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ বায়েজীদ জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুশতাক আহমেদের মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। তার পিঠের মধ্যভাগে যেকোনো সময় ‘ঘা’ হয়েছে এমন দাগ পাওয়া গেছে। ডান হাতে হালকা লালচে কালো ছোট দাগ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে আনার সময় বা গাড়িতে উঠানোর সময় এ দাগ হয়ে থাকতে পারে। তবে কোনো অসঙ্গতি নিশ্চিতের জন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে।
আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুশতাক সন্ধ্যা থেকে অসুস্থ অনুভব করলে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাত ৮টা ২০ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান আইজি প্রিজন মোমিনুর রহমান।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শাফী মোহাইমেন জানান, মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। দৃশ্যত, গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির পর বিস্তারিত বলা যাবে।
মুশতাক আহমেদের চাচাতো ভাই ডা. নাফিসুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মৃত্যুর খবর আমাদের রাত ৯টার দিকে জানানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক।’
ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ উড়িয়ে দিয়ে নাফিস বলেন, ‘আমি তো একজন চিকিৎসক। আমি তো একটি লাশ দেখলে বুঝি। আমি ওর পোস্টমর্টেমের সময় ভেতরেই ছিলাম। আমি কোনো সমস্যা দেখিনি। আমি তার লাশ দেখছি, কোনো অস্বাভাবিক চিহ্ন দেখিনি।’
গত ৫ মে র্যাবের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। রমনা থানার সেই মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে ৬ মে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলায় গত ১১ জানুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।
২৪ আগস্ট তাকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে তিনি সেখানে বন্দি ছিলেন।