কারাবন্দি অবস্থায় নিহত মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিয়ে মানহানিকর লেখা লিখার অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় নবনির্মিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
‘মুশতাক আহমেদ বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানিকর লেখা লিখতেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা মামলা ছিল। ২০২০ সালে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় তিনি গত মে থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি ছিলেন।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় গত বছরের মে মাসে গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাবন্দি ছিলেন লেখক মুশতাক। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যু হয়।
তবে ঠিক কী কারণে ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে তা এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি।
চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মুসতাক আহমেদের মৃত্যুর তদন্ত করা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মুশতাকের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালটির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শাফী মোহাইমেন বলেন, ‘মুশতাকের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
মুশতাকের মরদেহে অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি বলে জানিয়েছেন তার খালাতো ভাই চিকিৎসক নাফিস রহমান।
ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একজন চিকিৎসক। আমি ওনার ভাই। আমি পোস্টমর্টেমের সময় ছিলাম। আমি তার মৃত্যু নিয়ে অস্বাভাবিক কোনো কিছু দেখিনি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, হঠাৎ করেই আইজি প্রিজন থেকে তাকে সংবাদটা জানানো হয়। মুশতাক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কাশিমপুর কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে তাকে গাজীপুর তাজউদ্দিন মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যু হয় মুশতাকের।
মুশতাকের মৃত্যুর কারণ জানতে প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে হোক বা অ্যাক্সিডেন্টে হোক, একটা পোস্টমর্টেম হয়। পোস্টমর্টেমের পর সঠিকভাবে আমরা বলতে পারব কেন এই মৃত্যুটা হয়েছে। প্রয়োজনবোধে ইনকোয়ারি কমিটি করব।’
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আল জাজিরার তৈরি প্রতিবেদন নিয়েও কথা বলেন। প্রতিবেদন তৈরিতে জড়িত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
‘বাংলাদেশে থেকে কারা এই মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে সেটা নিয়ে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় শক্তভাবে কাজ করছে।’
নবনির্মিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ফলে জেলা পুলিশের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
‘এটি চট্টগ্রাম শহরের সুবিধাজনক স্থানে হওয়ায় পুরো জেলা তদারকিও সহজ হবে। সরকার বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক বিশ্বের অন্যতম একটি বাহিনীতে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী, আবু রেজা নদভী, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন এবং সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরসহ অন্যরা।