ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছেন।
মুশতাক আহমেদ গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। অসুস্থ হওয়ার পর তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মুশতাক সন্ধ্যা থেকে অসুস্থ অনুভব করলে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাত ৮টা ২০ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান আইজি প্রিজন মোমিনুর রহমান।
মুশতাক আহমেদের চাচাতো ভাই ডা. নাফিসুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মৃত্যুর খবর আমাদের রাত ৯টার দিকে জানানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক।’
এদিকে লেখক মুশতাককে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোটসহ অন্যান্য বাম সংগঠন।
এ অভিযোগ এনে সরকারের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ জোট সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে তাদের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগ দিয়ে বাংলামোটর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ।
সেখানে সমাবেশ থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান ও শাহবাগ অভিমুখে মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) সভাপতি আল কাদেরি জয়।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই রাষ্ট্র একজন লেখকের হত্যাকারী। একজন লেখককে কারাগারে রেখে হত্যা করেছে। এই রাষ্ট্রে কারও স্বাধীনতা নেই। আমরা এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিবাদ গড়ে তুলব।
‘আমরা শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাক। সেই মিছিলে আমরা সবাইকে আহ্বান করছি লেখক মুশতাককে হত্যা ও বিচারের দাবিতে।’
মধ্যরাতের এই বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত আরিফ, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) সভাপতি মাসুদ রানা, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলসহ জোট ও সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
গত ৫ মে র্যাবের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি ছিলেন।
মামলায় গত ১১ জানুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।
গত মে মাসে রমনা থানায় মুসতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে র্যাব এটিসহ তিনটি মামলা করে।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা মহামারি সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়।
গত সেপ্টেম্বরে এই মামলায় গ্রেপ্তার মিনহাজ মান্নান ও দিদারুল ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পান। কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাক জামিন পাননি।
মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়ে রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হাসনাত কাইয়ুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি তিনি অসুস্থ হয়ে বারান্দায় পড়ে গেলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।’
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘তার মামলা উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত দুইটাতেই চলছিল। নিম্ন আদালতে তার হাজিরা ছিল; জামিন হয়নি। হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছিল; শুনানি ছিল আগামী সপ্তাহে।’
মুশতাক আহমেদের চাচাতো ভাই ডা. নাফিসুর রহমান নিউজবাংলাকে আরও বলেন, ‘লাস্ট হাজিরার দিনে আমার সঙ্গে দেখা হলো, জড়িয়ে ধরলো। সে সুস্থ ছিল। বাসায় ফিরে তার বাবা-মাকে সেসব বললাম। তিন ভাই-বোনের মধ্যে দুই বোনই দেশের বাহিরে থাকে। বাবা-মা তার কাছেই থাকে।
‘১০ মাস হলো তো সে জেলে। অসুস্থ বাবা-মাকে আজ তার মৃত্যুর খবর দিতে হলো। ওয়াইফটাও অসুস্থ হয়ে গুলশানের এক হাসপাতালে ভর্তি আছে।’
পরিবার থেকে এখনও কেউ গাজীপুরে যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছে, আগামীকাল (শুক্রবার) সকাল ৯টায় মরদেহ হস্তান্তর করবে। তবে রাতেই মুশতাকের কয়েজন বন্ধু হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে।’