সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠা ব্যাংকার পি কে হালদারের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে ঘটনাচক্রে।
রাজধানীর উত্তরা, দিয়াবাড়ি, পূর্বাচল, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও নরসিংদীর সাত হাজার শতাংশ বা ৭১ একরেরও বেশি জমির সন্ধান পাওয়ার পর রাষ্ট্রের অনুকূলে জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর মধ্যে উত্তরার একটি জমিতে ১০ তলা ভবনও রয়েছে।
দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীনের আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
কীভাবে এই জমির সন্ধান পাওয়া গেল, সেটিও জানিয়েছেন দুদকের কর্মকর্তা উপ পরিচালক সালাহউদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভূলতা এলাকায় গাউছিয়া মার্কেট-২ এ পিকে হালদারের গোপন গুদামে অভিযান চালিয়ে কিছু দলিল দস্তাবেজ উদ্ধার করা হয়। সেই দলিলের ভিত্তিতে পিকে হালদারের এই জমির সন্ধান মেলে।’
নারায়ণগঞ্জের ভুলতার গাউছিয়া মার্কেটের এই গুদামে ছিল পি কে হালদারের সাত হাজার শতাংশ জমির দলিল
সালাহউদ্দীন বলেন, ‘পি কে হালদারের বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে তার অবৈধ সম্পদ জব্দের জন্য আমরা আদালতে একটি আবেদন করেছিলাম। বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত ওই সব সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেন।’
আলোচিত ব্যাংকার পি কে হালদারের বিরুদ্ধে তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। বর্তমানে তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন।
গত বছরের শেষ দিকে পি কে দেশে আসতে চেয়েছিলেন। তবে হাইকোর্টে আবেদন করেন যেন তাকে গ্রেপ্তার করা না হয়। তবে হাইকোর্ট আদেশ দেয় দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে যেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আর দেশে ফেরেননি।
পি কে দেশে না ফিরলেও তার বেশ কয়েকজন সহযোগী ও আলোচিত বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার সহযোগীদের ব্যাংকে থাকা এক হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা জব্দ করেছে দুদক।
দুদক সচিব আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি বলেন, 'পিকে হালদারের ইস্যুটা তো অনেক বড়। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জনের মাধ্যমে তার বিভিন্ন দিকে সূত্র আছে। ইতিমধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মোটামুটি জানা গেছে, ৬২ জনের সঙ্গে তার লিংকের সূত্র পাওয়া গেছে।’
যাদের অর্থ জব্দ করা হয়েছে তাদের তাদের মধ্যে আছেন জাহাজ মালিক সমিতির নেতা নড়াইলের লোহাগড়ার উপজেলার ইতনা গ্রামের বাসুদেব ব্যানার্জী, পাপিয়া ব্যানার্জী, একই গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ব্যাংকার নওসেরুল আলম এবং মমতাজ বেগম। শেষোক্ত দুই জন ব্যবসায়িক অংশীদার।
পি কে হালদারের বিষয়ে তথ্য চেয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে সাহায্য চেয়েছে দুদক। আর ইন্টারপোল তার বিষয়ে জারি করেছে রেড অ্যালার্ট।
দুদকের করা মামলায় বলা হয়েছে, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন পি কে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৌশলে তিনি ও তার সহযোগীরা অর্থ আত্মসাৎ করেন।
গত বছরের শুরুতে পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যান বলে তথ্য পাওয়া যায়। এরপর তার পাসপোর্ট, সম্পত্তি জব্দ করা হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফাইনান্স লিমিটেড-আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে অপসারণও করা হয়।