বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিডিআর বদলে যেভাবে হলো বিজিবি

  •    
  • ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:৩৩

বিডিআর বিদ্রোহের সূত্র ধরে শুধু নামই বদল হয়নি, সীমান্তরক্ষী বাহিনীটির মনোগ্রাম, পোশাক ও আইনেও বদল হয়েছে।

বিডিআর বিদ্রোহ দেশের ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়ই শুধু নয়, এই নৃশংসতা দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাঠামো বদলে দিয়েছে। বদলে গেছে এটির নাম।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির বিদ্রোহে পিলখানায় হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে।

এ রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়।

পরের বছরের ১ মার্চ খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। ২০১০ সালের ১২ জুলাই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইনের খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ বিল-২০১০ জাতীয় সংসদে পাস হয়।

২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি নতুন পতাকা উত্তোলন এবং মনোগ্রাম উন্মোচনের মাধ্যমে বদলে গিয়ে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) হয়ে যায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

শুধু নামেই নয়, সেদিন থেকে পরিবর্তন এসেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পোশাকসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে। নতুন আইনে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কেউ বিদ্রোহ করলে সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড, আগে বিডিআর আইনে যা ছিল ৭ বছর কারাবাস। এ ছাড়া মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে রাখা হয় পদোন্নতির ব্যবস্থা।

বিজিবির আদিরূপ

দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল ঔপনিবেশিক আমলে।

১৭৯৪ সালে ফ্রন্টিয়ার প্রটেকশন ফোর্স গঠন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। পরের বছর এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন। ২১৮ বছর আগের এই বাহিনী নানা সময়ে রূপান্তরিত হয়ে এখনকার বিজিবি হয়েছে।

১৮৬১ সালে পূর্বাঞ্চলের পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত ও অনিয়মিত ১ হাজার ৪৫৪ সদস্য সমন্বয়ে ফ্রন্টিয়ার গার্ডস নাম রেখে আবারও বাহিনী পুনর্গঠন করা হয়। তখন এর সদর দপ্তর করা হয় চট্টগ্রামে। ১৮৭৯ সালে স্পেশাল রিজার্ভ কোম্পানি নামে পিলখানায় প্রথম ঘাঁটি স্থাপন করে তারা।

১২ বছর পর ১৮৯১ সালে এ বাহিনীর নতুন নাম হয় বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ। তখন একজন ইউরোপীয় সুবেদারকে বাহিনীর নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের ঢাকা, দুমকা, ভাগলপুর ও গ্যাংটকে বাহিনীর চারটি কোম্পানি স্থাপন করা হয়।

১৯২০ সালে বাহিনীর জনবল ও শক্তি বৃদ্ধি করে ১৬টি প্লাটুন করা হয়। নাম বদলে রাখা হয় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলস। বাহিনীর প্রাথমিক কাজ নির্ধারণ করা হয় সীমান্ত রক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বাহিনীটির নাম করা হয় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)। কলকাতা মেট্রোপলিটন আর্মড পুলিশের একটি দল, কিছুসংখ্যক বাঙালি ও তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ১ হাজার সাবেক সেনাসদস্য বাহিনীতে যোগ দেন। পরে আরও ৩ হাজার বাঙালি সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। বাহিনীকে সুসংগঠিত করতে ও দক্ষ নেতৃত্বের প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী থেকে অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাহিনীর জনবল ছিল ১৩ হাজার ৪৫৪ জন।

মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকার পিলখানার তৎকালীন ইপিআর সদরদপ্তর আক্রমণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ওই আক্রমণের পর বাহিনীর সদরদপ্তর থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে।

প্রথম দিকে তারা বুড়িগঙ্গার অপর তীরে জিঞ্জিরায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ এবং আত্মঘাতী আক্রমণসহ অসংখ্য দুর্ধর্ষ অপারেশন পরিচালনা করেন। যুদ্ধে ইপিআরের ৮১৭ সদস্য শহীদ হন। তাদের মধ্যে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফকে সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয়। এছাড়া বাহিনীর আটজনকে বীর উত্তম, ৩২ জনকে বীর বিক্রম ও ৭৮ জনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়।১৯৭২ সালের ৩ মার্চ সদ্য স্বাধীন দেশে এ বাহিনীর নতুন নামকরণ হয় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ রাইফেলসকে দেওয়া হয় স্বাধীনতা পুরস্কার।

বিডিআর বিদ্রোহের কারণে ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি নতুন নাম বিজিবি ধারণ করে সীমান্তরক্ষী বাহিনীটি।

এ বিভাগের আরো খবর