ভুয়া আগাম জামিননামা তৈরির ঘটনায় বগুড়ার যুবলীগ নেতা আমিনুর ইসলামসহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তারে হাইকোর্ট বুধবার নির্দেশ দিলেও বৃহস্পতিবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।
পুলিশ বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ তাদের কাছে পৌঁছায়নি।
মামলার বাদীর বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন বলছেন, এমন অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা উচিত।
বগুড়ায় মোটরমালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ১০ ফেব্রুয়ারি পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে একটিতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের ছোট ভাই মশিউল আলম দীপন বাদী হয়ে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুর ইসলামকে প্রধান করে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। ওই মামলায় ৩৩ আসামির মধ্যে ৩০ জনের জামিননামার ভুয়া নথি তৈরি করা হয়।
ভুয়া জামিননামার বিষয়টি বুধবার ধরা পড়ার পরপরই বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিদের গ্রেপ্তারের আদেশ দেয়।
সাত দিনের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করতে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়। বিষয়টি তদন্ত করতে বগুড়ার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে নির্দেশও দেয় আদালত।
আদালতের ওই নির্দেশনার পর পরই আত্মগোপনে চলে যান সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুর ইসলামসহ ৩০ জন। বৃহস্পতিবার তাদের কাউকে এলাকায় দেখা যায়নি। বক্তব্য জানতে আমিনুলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তারা সর্বোচ্চ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে, অথচ তাদের ধরা হচ্ছে না। এটা অবাক করার মতো বিষয়।’
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জামিন জালিয়াতি সংক্রান্ত কোনো নথি এখনও আমাদের হাতে আসেনি।’
মামলার বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চের উল্লেখ করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জামিন পাওয়ার দাবি করেন বগুড়ার যুবলীগ নেতা আমিনুর ইসলামসহ ৩০ আসামি। তবে ওই দিন এই আদালত থেকে এমন কোনো আদেশ হয়নি। এমনকি সেখানে যেসব আইনজীবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাও ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে আমিনুর ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হয়ে ১৮ নম্বর কোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন নিয়েছি।’
তবে নিজের পক্ষের আইনজীবীর নাম জানাতে রাজি হননি আমিনুর। পরে তার মোবাইল ফোনে আবারও যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা এভাবে ভুয়া জামিননামা তৈরি করেছেন, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলে এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’