জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরুর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলন স্থগিত করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কর্মসূচি থেকে আটক শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া না হলে এবং শনিবারের মধ্যে স্থগিত পরীক্ষা নেয়ার লিখিত নোটিশ প্রকাশ না করা হলে রোববার থেকে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে একই দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল থামিয়ে দেয় পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে সকালে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে শিক্ষার্থীদের থামিয়ে দেয়।
ওই সময় শিক্ষার্থীরা সেখানেই অবস্থান নিয়ে পরীক্ষা চালুর দাবিতে ‘এক শিক্ষায় দুই নীতি চলবে না’, ‘শিক্ষা নিয়ে টালবাহানা চলবে না চলবে না’, ‘সাত কলেজের জয়ের মালা আমাদের কেন অবহেলা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ সময় মিছিলের মাঝখান থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়৷ তবে পুলিশের দাবি, এরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। এরা বিইউপির শিক্ষার্থী৷
আমানুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘করোনা কি শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, সাত কলেজের জন্য না? আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে এখানে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তিন বছর অনার্স চতুর্থ বর্ষে। আমরা এটির শেষ চাই।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আদায় করেছে তাদের অধিকার। কিন্তু আমরা আন্দোলন করিনি, তাই আমাদের পরীক্ষা সচল করা হচ্ছে না। তাই আমরা আজকে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।’
পুলিশের রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের দাবি যৌক্তিক৷ পরীক্ষার জন্য আন্দোলন নজিরবিহীন। আপনারা যাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারের সাথে দেখা করতে পারেন, সে ব্যবস্থা আমাদের পক্ষ থেকে করা হবে।’
এ সময় তিনি আটক শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়ারও আশ্বাস দেন।
পুলিশের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা পাবলিক লাইব্রেরির সামনে থেকে তাদের অবস্থান সরিয়ে নিলেও ফের শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের আটক সহপাঠীদের ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত এবং আগামী ৫ মার্চের মধ্যে স্থগিত হওয়া দুটি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা থানার পাশে অবস্থান নিয়ে পরীক্ষা চালু ও আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন৷ একপর্যায়ে পুলিশ এসে বাঁশি ফুঁ দিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়।
এর আগে শাহবাগে জড়ো হওয়ার চেষ্টাকালে পুলিশ অন্তত ১০ শিক্ষার্থীকে আটক করে। তাদের মধ্যে সাতজনের নাম জানা গেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৯ সালের দ্বিতীয় বর্ষ ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষা ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়। পরীক্ষা চলার কথা ছিল ২৩ মার্চ পর্যন্ত।
আর ২০১৯ সালের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা গত ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হচ্ছে।
তবে ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৪ মে থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরুর সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষাও শুরু হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।