বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আগে কিস্তি, পরে কথা: ঋণখেলাপিদের হাইকোর্ট

  •    
  • ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৭:২৮

‘এটি একটি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে জনগণের টাকা। এটা চোর-বাটপারদের টাকা না। আপনারা তো টাকা নিয়েছেন। আর যারা এই প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রেখেছেন, তারা তো না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।’

আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং থেকে টাকা নিয়ে যারা ফেরত দেননি তাদের জেলে যেতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে উচ্চ আদালত।

আদালতে একাধিক ঋণখেলাপি কথা বলতে গেলে এক বিচারপতি বলেছেন, প্রথম কিস্তির টাকা জমা দিয়ে আসলে তাদের কথা শোনা হবে, নইলে নয়।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি হয়।

ঋণখেলাপিদের বিচারপতি খুরশীদ বলেন, ‘আগে প্রথম এক কিস্তি পরিশোধ করুন, তারপর কথা বলুন। প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে হবে। আগে টাকা দেবেন তারপর আলোচনা। না দিলে জেলে যেতে হবে।’

এই প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করা সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত ঋণগ্রহীতা এমন ২৮০ জনকে তলব করেছে হাইকোর্ট।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় ৫১ জন হাজির হন উচ্চ আদালতে। দ্বিতীয় দফায় আজ হাজির হন ৪৫ জন।

যারা এখনও আসেননি তাদের আগামী ৯ মার্চ আবার হাজির হতে বলা হয়েছে। ওই দিনও না এলে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে হাজির করা হবে বলেও জানায় আদালত।

হাজিরা দেয়া ৪৫ ঋণগ্রহীতা কেউ কেউ টাকা পরিশোধের সময় চান, কোনো কোনো ঋণগ্রহীতা মারা গেছেন এখন তার কী হবে, সে ব্যাখ্যা চান তার উত্তরসূরিরা।

এ সময় বিচারপতি আগে একটি কিস্তি পরিশোধ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে জনগণের টাকা। এটা চোর-বাটপারদের টাকা না।

‘আপনারা তো টাকা নিয়েছেন। আর যারা এই প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রেখেছেন, তারা তো না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।’

আদালত বলে, ‘টাকা না দিয়ে কোনো মন্ত্রী বা কারও প্রভাবে কাজ হবে না। আইনের মধ্যে থেকেই টাকা দিতে হবে। কোর্ট যেহেতু ডেকেছে প্রথম একটা ইনস্টলমেন্ট দেন। তারপর বাকি আলোচনা করে নেবেন বোর্ড বা কমিটির সঙ্গে। কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখতে হলে আপনারা টাকা না দিলে কীভাবে হবে?

এরপর এক আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘আদালত যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমানতকারীরা আলোর মুখ দেখছেন। বাইরে আলোচনা হচ্ছে এভাবে যদি আরও দুই-একটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সাহস পাবেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হবে।’

তখন বিচারপতি খুরশীদ বলেন, ‘এটা তো কোর্টের কাজ না। এর জন্য যাদের দায়িত্ব রয়েছে তারা কেন এটা করছেন না? আমাদের কাজ হলো প্রতিষ্ঠান ওয়েন্ডিং আপ (অবসায়ন) করা। এখন প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে চাই বলে এসব করতে হচ্ছে।’

ধারাবাহিক লোকসানে থাকা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং ২০১৪ সালের পর থেকে আমানতকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এরপর ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে দেশের পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হয়। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতেও প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত বছরের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। একপর্যায়ে পিপলস লিজিংয়ের ভুক্তভোগী কয়েক আমানতকারী টাকা ফেরত পেতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় মামলাটির শুনানি হয়।

আদালতে অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আদালতে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। আর ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে একাধিক আইনজীবী ছিলেন।

আইনজীবী মেজবাহুর রহমান জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে কোম্পানি আদালত পিপলস লিজিংয়ের ঋণগ্রহীতাদের তালিকা দাখিল করতে বলে। সে অনুসারে ঋণগ্রহীতা ৫০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা গত বছরের ২৩ নভেম্বর আদালতে দাখিল করা হয়। পরে আদালত তার মধ্য থেকে ২৮০ জনকে তলব করে।

প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবে বলেও গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিল হাইকোর্ট। আগামী ৯ মার্চ এ বিষয়েও শুনানি হতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর