দেশে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরুর পরও এই সমস্যার সমাধান হয়নি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ জন্য টিকা নেয়ার পরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে ৫৫তম ব্যাচের ক্যাডেটদের মুজিববর্ষ গ্রাজুয়েশন প্যারেড অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার সকালে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘…এই করোনাভাইরাসের কারণে যেখানে সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। অনেক উন্নত দেশের থেকেও আগে আমরা ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছি। টিকাদান কর্মসূচি আমরা চালু করে দিয়েছি। মানুষের জন্য আমরা সুরক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
‘যদিও আমরা টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি, তবুও আপনারা এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম-নীতি মেনে চলবেন। মাস্ক ব্যবহার করা, হাত পরিষ্কার রাখা, এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন এবং আপনার সুরক্ষা অন্যকেও সুরক্ষিত করবে।’
তিনি বলেন, ‘টিকা দেয়ার পর এটা কেউ মনে করবেন না যে, আপনাদের সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। এটা মনে রাখতে হবে এরপরেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখাটা হলো সবসময় মাস্ক পরতে হবে; সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।
‘আমি আশা করি প্রত্যেকেই সেদিকে লক্ষ রাখবেন। অন্তত আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষের সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা যেন পায় তার ব্যবস্থা করতে। এর জন্য যথাযথভাবে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’
‘নাব্যতা ফিরিয়ে নৌপথকে সচল করে দিচ্ছি’
দেশের নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নৌপথকে আরও উন্নত করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে, নদী মাতৃক বাংলাদেশের নৌপথকে আরও উন্নত, আরও সচল করে দিচ্ছি, যেন আমরা দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য পরিবহন সুষ্ঠুভাবে করতে পারি।
‘এ জন্য আমরা মেরিন একাডেমিগুলো প্রতিষ্ঠা করে ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিচ্ছি। দেশে-বিদেশে অর্থ উপার্যন করে তারা একদিকে যেমন পরিবারকে সহযোগিতা করছে, পাশাপাশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতেও সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’
দেশের বিশাল সমুদ্রসীমা ব্যবহার করার চিন্তা অতীতের কোনো সরকারই করেনি বলে অভিযোগ করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতির পিতা ৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করলেও ৭৫ পরবর্তীতে আসা কোনো সরকারই এ উদ্যোগ গ্রহন করেনি। জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ বা খালেদা জিয়ার কোনো উদ্যোগই ছিল না।
‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করি। এরপর আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি, যে সমুদ্র সম্পদ আমাদের অর্থনীতির কাজেও ব্যবহার করতে পারি।
‘তা ছাড়া বে অব বেঙ্গল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চ্যানেল; গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। বিশ্বের অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য এখান থেকে চলে।’
‘কর্মসংস্থান সৃষ্টি সরকারের লক্ষ্য’
স্বাধীন বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সরকারের লক্ষ্য বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের লক্ষ্য, ভৌগোলিকভাবে আমরা খুব বড় না। কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে আমরা অনেক বেশি।
‘আমাদের দেশে ছেলে-মেয়েদের জন্য বা প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নতি করে যে চেতনা নিয়ে এবং যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, এটাও আমাদের লক্ষ্য। এই মেরিন একাডেমি জাতির পিতার হাতে প্রতিষ্ঠিত, এখানে যেমন সকলে ট্রেনিং পায় আবার কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়।’
এ সময় মেরিন একাডেমির ৫৫তম ব্যাচের প্যারেডে অংশ নেয়া সবাইকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকে যারা এখান থেকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবেন তারা সবাই যেখানেই কাজ করুক নিজের দেশ হোক বা বিদেশ হোক, সে দেশের আইন নিয়ম-কানুন, সমুদ্র আইন সবকিছু মেনে চলতে হবে।
‘শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে যাতে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণ্ন থাকে। যারা নাবিক হিসেবে কাজ করবে বা বিদেশে কাজ করছে, রেমিট্যান্স কিন্তু আসছে। সেই রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে কাজ করছে।’
মেরিন একাডমির উন্নয়নে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘আমাদের ক্যাডেটরা নতুন জীবনে পদার্পণ করবে। সেখানে দেশের মান রক্ষা করে চলতে হবে। সেই সাথে যখন যে দেশে যাবে আমাদের সভ্যতা, আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতি সেটাও আদান প্রদান করতে হবে এবং সেখান থেকে ভালো কিছুও নিয়ে আসতে হবে।
‘নিজ দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে, যাতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়। মনে রাখতে হবে, লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে যদি নির্মমভাবে হত্যা করা না হতো আর তিনি যদি হাতে সময় পেতেন বহু আগেই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হতো।
‘জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি বলে এবং দীর্ঘদিন সরকারে থাকার সুযোগ পেয়েছি বলে আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়ন করবার সুযোগ আমরা পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘বিশ্বটা এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজ। শিল্প, বাণিজ্য সবকিছুতেই কিন্তু যোগাযোগের একটা ভূমিকা রয়েছে। আর সমুদ্র পথেই অধিকাংশ পণ্য পরিহন হয়। নদী এবং সাগর অর্থাৎ জলপথ, এটাই হচ্ছে বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
‘যেখানে আমাদের খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে, সেদিক থেকে সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এই পরিবহন ব্যবস্থাটা সবচেয়ে উপযুক্ত। যদি এই পণ্য পরিবহনের সুযোগটা না থাকত, তাহলে হয়তো অর্থনীতিটাই স্থবির হয়ে যেতো।’